লালমনিরহাটে ১৯৭১ সালের ৯ নভেম্বর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী কর্তৃক বড়বাড়ী ইউনিয়নের আইরখামার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ব্রাস ফায়ারে নির্মমভাবে নিহত শহীদ আবুল কাশেম সাহেব-এঁর ৫৪তম শাহাদৎ বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে স্মরণসভা, আলোচনা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার (৯ নভেম্বর) সকাল ১০টায় লালমনিরহাটের বড়বাড়ীস্থ শহীদ আবুল কাশেম মহাবিদ্যালয় চত্বরে শহীদ আবুল কাশেম মহাবিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনায় শহীদ আবুল কাশেম সাহেব-এঁর ৫৪তম শাহাদৎ বার্ষিকী স্মৃতিচারণ ও আলোচনা সভা, মিলাদ মাহফিল ও দোয়া, শোক র্যালি ও শহীদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান অতিথি ছিলেন শহীদ আবুল কাশেম মহাবিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু। এ সময় লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এ্যাড. রফিকুল ইসলাম রফিক, রোকন উদ্দিন বাবুল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক একেএম মমিনুল হক, এবিএম ফারুক সিদ্দিকী, সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন, মোঃ সাহেদুল হক পাটোয়ারী, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আবুল বাশার সুমনসহ বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং শহীদ পরিবারের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ, শহীদ আবুল কাশেম মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) অবিনাশ রায়, শহীদ আবুল কাশেম উচ্চ বিদ্যালয়, হাবিবা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, আমবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বড়বাড়ী কিন্ডার গার্টেন, বড়বাড়ী ক্যামব্রিয়ান কিন্ডার গার্টেনসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা শহীদ আবুল কাশেম সাহেবের অবদানের কথা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি সাহসিকতা, দেশপ্রেম ও ত্যাগের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি দেশের মহান স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণে লড়াই করেছেন।
তাঁরা আরও বলেন, শহীদ আবুল কাশেম শুধু একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা নন, তিনি একজন নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবকও ছিলেন। শিক্ষা বিস্তারে তাঁর অবদান অন্যন্য। সমাজে আলোর দিশা দেখাতে তিনি শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন এবং মানুষের কল্যাণে আজীবন কাজ করেছেন।
বক্তারা শহীদের আদর্শ ও দেশপ্রেম থেকে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শিক্ষা নেওয়ার আহ্বান জানান। তাদের মতে, জাতির এই গর্বিত সন্তানকে স্মরণ করা মানে দেশ, সমাজ ও মানবতার কল্যাণে কাজ করার অঙ্গীকার পুনর্নবীকরণ করা।
শহীদ আবুল কাশেমকে ১৯৭১ সালের ৯ নভেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী লালমনিরহাট জেলা সদরের বড়বাড়ী ইউনিয়নের আইর খামার এলাকায় নির্মমভাবে হত্যা করে। তিনি লালমনিরহাটসহ আশেপাশের মানুষের প্রিয় বন্ধু ছিলেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের বাঙালি সৈনিকদের গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শদাতা ছিলেন।
তিনি সব সময় সুখে-দুঃখে মানুষের পাশে দাঁড়াতেন। শহীদ আবুল কাশেম এই অঞ্চলের শিক্ষা ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষাগত কর্মকাণ্ডে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন।
পরবর্তীতে বড়বাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও পাঙ্গারানী লক্ষ্মীপ্রিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার প্রসারে নেতৃত্ব প্রদান করেন।
উল্লেখ্য যে, শহীদ আবুল কাশেম মহাবিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু-এঁর শ্রদ্ধেয় পিতা অত্র এলাকার সকল মানুষের শ্রদ্ধাভাজন বড়বাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের আজীবন চেয়ারম্যান পাঙ্গা রাণী লক্ষ্মীপ্রিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের আজীবন প্রধান শিক্ষক বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী শহীদ আবুল কাশেম সাহেব।