আলোর মনি ডটকম ডেস্ক রিপোর্ট: গ্রাম ও শহর সাধারণ মানুষ বর্তমান পরিস্থিতিতে করোনা সংক্রামণের ভয়ের দিন কাটাচ্ছে। এরই মধ্যে লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ী ইউনিয়নের পূর্ব ভেলাবাড়ী গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে গৃহপালিত পশু-পাখির শরীরে বড় বড় গুটি গুটি ভাইরাস জর্নিত চর্ম রোগের সংক্রামণ দেখা দিয়েছে। এই চর্ম রোগ গবাদি পশু হতে মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়ার আতংকে দিন কাটছে গ্রামবাসীর।
জানা গেছে, লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ী ইউনিয়নের পূর্ব ভেলাবাড়ী গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে গৃহপালিত পশু-পাখি, হাঁস-মুরগি, ছাগল, ভেড়া, গরু ও মহিষের শরীরে বড় বড় গুটি গুটি ভাইরাস জর্নিত রোগের সংক্রামণ দেখা দিয়েছে। গত কয়েক দিনে ভাইরাস জর্নিত এই চর্মরোগ এবাড়ি ওবাড়ি হতে প্রতিটি বাড়ির গৃহপালিত পশুপাখির শরীরে দেখা দিয়েছে।
পূর্ব ভেলাবাড়ী গ্রামের কৃষক ইসলাম জানায়, তার বাড়ির দু’টি গরুসহ গ্রামের প্রতিটি বাড়ির গৃহপালিত প্রাণি ও পশু- পাখির মধ্যে এই রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। শুধু তার গ্রামে নয় আশেপাশের গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে।
গরুর পল্লী চিকিৎসক মনির মিয়া জানান, গত কয়েক দিন ধরে হঠাৎ গবাদি পশুর শরীরে এই বড়বড় গুটি গুটি ফোলা রোগ মহামারি আকারে দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন ২০/৩০টা বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা দিতে হিমসিম খাচ্ছি। কোথাও কোথাও পশুর গায়ের চামড়ার নিচের ফোলা জায়গা ফুটে গিয়ে গবাদি পশুর দেহে ঘা দেখা দিয়েছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের ইউনিয়ন পর্যায়ের পশু চিকিৎসক, উপজেলা পর্যায়ের প্রাণিসম্পদ ও জেলা পর্যায়ের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাগণ এই রোগের সংক্রামণ ও প্রকোপ সম্পর্কে এখনো অবগত নয় বলে জানান। এই রোগ গৃহপালিত পশু পাখির শরীর হতে বন্যপ্রাণির শরীরে ছড়িয়ে পড়লে ভাইরাসের অস্তিত্ব নিঃশেষ হবে না। বহু বছর ধরে ঘুরে ফিরে এই রোগ দেখা দিবে।
পশুর ভাইরাস জর্নিত চর্ম রোগ সম্পর্কে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা পশু চিকিৎসক সাইদুর রহমান জানান, এটা মশাবাহিত ভাইরাস জর্নিত পশুর চর্মরোগ। দ্রত চিকিৎসা না করালে ফোলা স্থানে ঘা হয়ে যায়। পশুর শরীরের তীব্রজ্বর দেখা দেয়। পশুর খুদামন্দা দেখা দেয়। পশু ঝিম ধরে থাকে। কয়েক দিন পর শরীর শুকিয়ে মারা যেতে পারে। তবে চিকিৎসা করালে দ্রুত সুস্থ্য হয়ে উঠে। হিস্টাসিন, পশুর শরীরে জ্বর হলে প্যারাসিটামল ও একটি এ্যান্টিবাইটিক খাওয়ালে পশু কয়েক দিনের মধ্যে সুস্থ্য হয়ে উঠবে। গরুর এ্যান্থাক্স রোগের মত এটিও একটি ভাইরাসরোগ।
লালমনিরহাট জেলার কয়েকটি স্থানে গত বছর এ সময় এই রোগের প্রকোপ দেখা দিয়ে ছিল। আক্রান্ত পশুর মাংস ভাল করে সিদ্ধ বা রান্না করে খেতে হবে। তা না হলে ভাইরাস মানব দেহে ছড়িয়ে মানুষের চর্মরোগ হতে পারে। পৃথিবীর যেকোন ভাইরাস পশু হতে মানব দেহে ও মানব দেহ হতে পশুর দেহে ছড়াতে পারে। এই সম্ভবনার ঝুঁকি এড়াতে সকলকে সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। বাজারের স্বল্পমূল্যে এই ভাইরাস সংক্রামণের পশুর ঔষধ পাওয়া যায়। দ্রুত আক্রান্ত পশুর চিকিৎসা করালে এই রোগের সংক্রামণ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে পশুর চিকিৎসা ও ওষধ দেয়া হয়। আক্রান্ত গবাদি পশুর মালিকদের নিকটবর্তী পশু হাসপাতালে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়েছে।
লালমনিরহাটড় সিভিল সার্জন ডাঃ নির্মলেন্দু রায় জানান, পশু হতে মানুষের দেহে ও মানুষের দেহ হতে পশুর দেহে ভাইরাস ছড়াতে পারে। তবে এই ভাবে ভাইরাস মানুষের দেহে সক্রামণের প্রকোপ খুব কম। তবে যেহেতু সারা বিশ্বে মানুষ করোনা বা কোভিন-১৯ নামের ভাইরাসের সংক্রামণের প্রকোপে পড়েছে। এ থেকে বাংলাদেশেও রক্ষা পায়নি। তাই ভাইরাস জর্নিত যে কোন রোগ মানুষের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে। তাই মানুষকে সর্তক, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। ভাইরাসে আক্রান্ত ও কোন রোগাক্রান্ত পশু পাখির মাংস জেনে শুনে রান্না করে না খাওয়া ভাল। তবে ভালভাবে আগুনে সিদ্ধ ও রান্না করে খেতে হবে। তারপরেও ঝুঁকি থেকে যায়। কারণ আক্রান্ত পশুর মাংস ধূতে গিয়ে রান্নার প্রস্তুতির পূর্বে রাঁধূনি ভাইরাসে আক্রান্ত হবে পারে। তার থেকে পরিবারের সদস্যরা আক্রান্ত হতে পারে। করোনার সংক্রামণের মধ্যে এই রোগ দেখা দিলে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার আতংক দেখা দিতেই পারে। তবে মানুষকে আতংকিত না হয়ে প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।