শিরোনাম :
সাপ্তাহিক আলোর মনি পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। # সারাবিশ্বের সর্বশেষ সংবাদ পড়তে আমাদের সঙ্গেই থাকুন। -ধন্যবাদ।
শিরোনাম :

‎ভারত নয়, বাংলায় এবার অন্য ঢেউ

‎:: হেলাল হোসেন কবির :: বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক হিসাব এখন কিছুটা দুর থেকে নাড়াচাড়া হচ্ছে। আমরা এতোদিন ধরে ভারত আর পাকিস্তানের কথার মোহে যে কার্যধারণ দেখতে পাচ্ছি এই কথা কিছুটা আবেগের ঠোঁটে থেকে যাচ্ছে।

‎আমাদের নিয়ে এখন ছক গুণছে সরাসরি রাশিয়া। আর কার্য চালাচ্ছে তুরস্ককে দিয়ে। তারা দীর্ঘদিন ধরে এখানে বুদ্ধিজীবি নিয়োগ করে নিয়মিত খোঁজ খবর রেখে আসছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশের অনেকে বিদেশের মাটিতে আছেন এমন ঘরোনার বুদ্ধিমান মানুষকে টার্গেট করে কাজ করেছেন রাশিয়া।

‎আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে- ক’দিন আগে পুতিন গিয়েছিলেন তুর্কমেনিস্তান? তিনি এরদোয়ানের সাথে ৪০-৫০ মিনিট রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছিলেন। অনেকে মনে করেন সেখান থেকেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক আবহ পরিবর্তন। সেই বৈঠকে নাকি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী থাকতে চেয়েছিলেন। পাক প্রধানমন্ত্রীকে গুরুত্ব না দিয়ে নতুন ছকে বাঁধা হয় বাংলাদেশকে।

‎তবুও নাকি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বাইরে অপেক্ষায় ছিলেন পুতিনের সাথে দেখা করার জন্য। দীর্ঘ অপেক্ষার পর তিনি অপমানিত ও বিরক্ত হয়ে রেগেমেগে চলে গিয়েছিলেন। দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক ৪০-৫০ মিনিট হওয়া বিচিত্র কিছু নয়। কিন্তু, সেই সময়টুকু তিনি সহ্য করতে না পেরে রেগে মেগে চলে গেলেন। আবার কিছু মিডিয়া দাবি করে বলেছে তিনি জোর করে পুতিনের কক্ষে প্রবেশের চেষ্টা পর্যন্ত করেছিলেন যা শিষ্টাচার বহির্ভূত। সেই বৈঠকে অংশ নিতে কেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এমন অস্থির হয়ে পড়েছিলেন?

‎কারণ, বাংলাদেশ প্রসঙ্গে তিনি চেয়েছিলেন এরদোয়ানের সাথে বৈঠকের আগে যেন তাঁর সাথে বৈঠক হয়। সেই অনুযায়ী তিনি সময় চেয়েছিলেন। কিন্তু, পুতিন চেয়েছিলেন অন্য কিছু। কেননা, বাংলাদেশের ভিতরে ভারতপন্থী আর পাকিস্তানপন্থীর ডামাডোল লেগেই আছে। তাই তিনি তুরস্কের প্রতি আগ্রহ দেখান। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়তো জানতেন পুতিন এরদোয়ান এমন কিছু সিদ্ধান্তে নিতে চলেছেন যেটা দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতির উপর প্রভাব রাখবে। এবং সেটা অবশ্যই বাংলাদেশ প্রসঙ্গে।

‎হিসেব করে দেখা যায়, এর অল্পদিন আগে পুতিন ভারত ঘুরে গেছেন। রাশিয়া বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্র সেই ৬০ এর দশক থেকে সহযোগিতার সম্পর্ক ছিলো। হয়তো বাংলাদেশ নিয়ে ভারতকে কিছুটা নিরব ভূমিকা রাখার জন্য বলেছেন রাশিয়া। তার পরে তড়িঘড়ি করে তুরস্কের সঙ্গে বৈঠক।

‎অবশ্য রাশিয়া ভারতের সাথেও তড়িঘড়ি করেই বৈঠকে অংশ নিয়েছেন। সেটা স্পষ্টতা পায় পুতিনের ভারত সফর করার কথা ছিলো ১২-১৫ ডিসেম্বর। তিনি আকস্মিকভাবে সেই সফর এগিয়ে আনলেন ৫ ডিসেম্বরে। কেন এমন তড়িঘড়ি? কারণ, ১২ ডিসেম্বর তুর্কমেনিস্তান সফর করবেন এবং সেখানেই বোর্ডের ডানপাশের ঘোড়ার চাল অপেক্ষা করছিলো। পুতিন ভালো করে জানেন ভারত সফর ছাড়া সেই চাল পূর্ণতা পাবে না। মনে হচ্ছে ভারতের সম্মতি ছিলো এই বৈঠকে। কারণ, ভারত চায় যেকোনো ভাবে বাংলাদেশের সাথে যুদ্ধ পরিস্থিতি বা সংঘাতের পরিবেশ এড়াতে। এটা পরিস্কার বাংলাদেশের সাথে যুদ্ধ করে জিতলেও ভারতের লস ছাড়া কোনো লাভ নাই। বাংলাদেশেরও নাই। আছে পাকিস্তানের লাভ।

‎ভারত বুঝে গেছেন তাদের দাদাগিরি মানাবে না বাংলাদেশ। আর বাংলাদেশে মৌলবাদের উত্থান হলে পাকিস্তানের বড় লাভ, তুরস্কের ছোট লাভ বা লাভের সম্ভাবনা। কিন্তু ভারতের বড় লস। তাই তারা অপেক্ষাকৃত নমনীয় কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অর্থাৎ, জঙ্গীবাদ ঠেকাতেই সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছেলে বর্তমান বাংলাদেশ মানুষের মাঠ পর্যায়ে গ্রহণ যোগ্য  তারেক রহমানকে দেশে ফেরার ব্যবস্থা করা। কারণ, আশা করা হচ্ছে এর মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্রের চর্চা ফিরবে। কিন্তু, তার জন্য বিএনপিকে ‘জামাতের ছোট ভাই’ পদ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ছাড়তে হবে পাকিস্তান পন্থাও। ভারত হয়তো এটা চায় যে, বাংলাদেশ সরাসরি ভারতপন্থী না হলেও যেন সরাসরি পাকিস্তানপন্থী না হয়। এটাই এখন মাথা ব্যাথা তাদের।

‎হয়তো রাশিয়া খোঁজ খবর রাখছিলেন যে, বাংলাদেশে ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে মূলত সেখানে মধ্য ডান হিসেবে বিএনপি এবং চরম বামপন্থীদের অনেকের ভূমিকা থাকলেও কেউই মূল গেইমের ভিতর বাহির জানতো না, বুঝতে পারেনি। ফলে, ক্ষমতা দখলের পর বিএনপি ভ্যাবাচেকা খেলেও জামাত যেহেতু তাদেরই শরীক ভাই, সেহেতু তারা মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে আসছিল। শেষমেশ জামাত ভিন্ন রূপে চলতে শুরু করে।

‎ভারত শিক্ষা নিয়েছেন যে বাংলাদেশ তাদের কথার মূল দিবে না। তারেক রহমান দেশে আসার সকল কিছু তথ্য পেয়ে দেশের মধ্যে গন্ডগোল বাজাতে ভারত বি টিমের লোকজন কাজ করতে পারে। ঢাকায় জুলাই যোদ্ধা হাদিকে গুলি হত্যা ও একই সময়ে ময়মনসিংহে দীপু দাসকে জনসম্মুখে পুড়িয়ে মারা সবকিছু ভারতের বি টিমের ইশারায় হতে পারে। তাহলে ভারত চিন্ময় দাসের গ্রেফতার নিয়ে যে নাটক করলো দীপু দাসের জন্য কিঞ্চিৎ আগ্রহ দেখালো না কেন? এমনকি তারেক রহমান দেশে আসার দুদিন আগেও ককটেল দিয়ে এক ছেলেকে হত্যা রহস্যময়। তবে, বুঝা যাচ্ছে না আমেরিকা আর পাশের চীনের ভূমিকা। এটা ঠিক যে, আমেরিকার চট্টগ্রাম বন্দর পেয়ে কিছুটা নিরবে দেখা শুনা করছেন।

‎গত ১ বছরে পাকিস্তানের কর্মকর্তারা বাংলাদেশ সফর রাড়িয়ে দিতে থাকে। রাশিয়া এটাও পরিস্কার হয়েছেন যে, বাংলাদেশ নিয়ে পাকিস্তানের পিছনে লক্ষ্য বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের সামরিক চুক্তি, ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ করা ও সংবিধান পরিবর্তন করে কিছু উপায় খোঁজাসহ বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তান হস্তক্ষেপ করতে চায়। বাংলাদেশে চরম ডানপন্থীরা গোপনে অনেকদূর এগিয়ে গেছে। হাতে বেশি সময় নেই।

‎বাংলাদেশেকে সহযোগিতা করা আর এক দেশ তুরস্ককে রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা কয়েক মাস আগে থেকে কিছু পরামর্শ দিয়ে আসছেন। এখানে তুরস্কপন্থী এক্টিভিজম পিনাকীকে ব্যবহার করা হয়। আবার ইলিয়াস পাকিস্তানপন্থী অবস্থান নিয়ে এক্টিভিজম করে আসছেন। তাই তাকে আলাদা করার জন্য ভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এবং তাই হয়েছে।

‎মোট কথা, পুতিন ভারত থেকে ফিরেই এরদোয়ানের সাথে যোগাযোগ করলেন এবং তুর্কমেনিস্তানে বৈঠকের ব্যবস্থা করলেন। আর তার আগে এই তথ্য পাকিস্তানের কাছে ছিলো যে, এরদোয়ান এবং পুতিনের বৈঠক বাংলাদেশের রাজনীতি পালটে দিতে পারে। ফলে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পুতিনের সাক্ষাৎ চাইলেন এবং সেটা এরদোয়ানের সাথে বৈঠকের আগেই। তিনি সেটা পেলেন না।

‎বাংলাদেশের ইতিপূর্বের আর চলমান কার্যক্রম দেখে ডানপন্থীও বামপন্থীর মিশ্রণের রাজনীতি দেখলে ধারণা পাওয়া যায় যে, জামাত কখনোই বিএনপির হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেবে না। বরং তারা একের পর এক মাস্টারপ্ল্যান করে যাচ্ছে আগামী ২০-৩০ বা ৫০ বছরের জন্য ক্ষমতায় জেঁকে বসার। ধর্মকে ব্যবহার করে খিলাফত কায়েমের নামে বাংলাদেশের অন্য সকল রাজনৈতিক দলকে মুছে দেয়াই তাদের শেষ এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।

‎ইতিমধ্যে কিছু জরিপে বিএনপি সমর্থক বেশি উঠে আসায় জামাত গং বুঝতে পেরেছেন মধ্য ডান থেকেই তাদেরকে সমর্থন টানতে হবে, আওয়ামী বা বাম থেকে কঠিন বা অসম্ভব। সুতরাং জামাত গংদের সিদ্ধান্ত বিএনপিকে ধ্বংস করে দিয়ে তাদের দল ভারি করতে হবে, এবং পরবর্তীতে মধ্য ডান এবং বামদের দমন-পীড়ন করা হবে।

‎জামাতের প্ল্যানের ধাপগুলি ছিলো তারেক জিয়াকে রাজনীতি থেকে ফেলে দেয়া, বিএনপিকে টুকরো টুকরো করে দেয়া, বিএনপির বড় বড় নেতৃত্বকে বুঝিয়ে, লোভ দেখিয়ে বা অন্য মাধ্যমে জামাতের সাথে নেয়া, পাঠ পর্যায়ে প্রচার ও প্রমাণ করা বিএনপি জামাত প্রায় একই দল। অথবা কোথাও কোথাও বিএনপিকে ক্ষেপে তোলা। ইতিমধ্যে বেশ কয়জন বিএনপির নেতাকে তাদের দলেও ভিড়িয়েছেন।

‎হয়তো এসব ইনফরমেশনই রাশিয়ার কাছে আছে।  সবমিলিয়ে তারেক জিয়াকে এই অবস্থায় বাংলাদেশে আসার ইঙ্গিত করার ভারত আর পাকিস্তানের বাঁধাকে মোকাবিলা জন্য তুরস্ককে কাজে লাগিয়েছে পুতিন। এরদোয়ানের সাথে পুতিনের বৈঠকের দিনই দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক হিসাব পরিবর্তন হতে শুরু করলো। তারপর পিনাকী ছুটে গেছেন তুরস্কে।

‎সেটাকে একনভাবে তুরস্কপন্থী পিনাকী পাকিস্তানপন্থী ইলিয়াসকে উস্কে দেয় ভারত বিরোধী শ্লোগান টেনে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানট এবং উদীচীতে আঘাত করার জন্য। ইলিয়াস আর পিনাকী নিজেদের মতো বাংলাদেশ দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবির নেতা দিয়ে প্রচার চালিয়ে পত্রিকা অফিস ভাংচুরে উৎসাহ দেখালো। এরপর ইলিয়াসের সামাজিক যোগাযোগ আইডিকে নষ্ট করার মাস্টার মাইন্ড হিসাবে কাজ করলেন অন্য কেউ। তারপর ইলিয়াসের বাংলা এডিশনের নিবন্ধন বাতিল। তাতে ক্ষেপে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করলেন জামাতের লোকজন। ইলিয়াসের পক্ষে  টকশো মাত করলেন জামাতের শাহরিয়ার কবির। কৌশলে বিএনপিকে ব্যবহার করে জামাত তাদের শিকড় আরো গভীরে প্রথিত করতে চায়। তাদের কিছু শক্তির ব্যাকআপ সরিয়ে নেয়া হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তারা দমে যাবে না।

‎অবশেষে, ২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমান দেশের মাটিতে আসলেন, বিমানবন্দর থেকে নেমে খালি পায়ে দেশের মাটিতে হেটে মুষ্টিবদ্ধ হাতে দেশের মাটি ধরে শ্বাস দিয়ে আলিঙ্গন করে জনতার মঞ্চে উঠে ভাষণ দিলেন।

‎দেশের মানুষের দুঃখ, হতাশা দুর করতে ও জঙ্গীবাদ ঠেকাতেই তারেক জিয়ার দেশে ফেরা। আশা করা হচ্ছে এর মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্রের চর্চা ফিরবে। তবে, ভারতের দাদাগিরি নয় পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণে দেশ চলুক এই কামনায়….।

‎[লেখক: কবি ও সাংবাদিক, লালমনিরহাট।]

সংবাদটি শেয়ার করুন




এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
Design & Developed by Freelancer Zone