:: মোঃ মাসুদ রানা রাশেদ:: শস্য শ্যামল নদী পাহাড় বন ও সাগর ঘেরা পৃথিবীর লক্ষকোটি ভক্ত হৃদয়ের আহ্বানে ঐশ্বর্য্যদায়িনী, মহিষাসুরমর্দিনী, দূর্গতিনাশিনী, মাতৃরূপিনী জগৎজননী ‘মা’ আসছেন মর্ত্যধামে- সে জন্য ঘরে ঘরে শারদীয় উৎসবের ধুম লেগেছে। লালমনিরহাট জেলায় দূর্গাতিনামিনী ‘মা’ দেবীদূর্গার বোধনের মধ্য দিয়ে আগামী রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) থেকে শারদীয় দূর্গোৎসব শুরু হয়ে বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে তা সমাপ্তি ঘঠবে।
হিন্দু সম্প্রদায়ের দূর্গোৎসব আবহমান বাংলার শ্বাশত সংস্কৃতির অংশ। লালমনিরহাট জেলায় সর্বত্রই বিরাজ করছে শারদীয় দূর্গাপূজার আনন্দ উৎসবের।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ লালমনিরহাট জেলা শাখার সভাপতি হীরা লাল রায় ও সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ চন্দ্র রায় সূত্রে জানা যায়, লালমনিরহাট জেলায় এবারে মোট ৪শত ৬৭টি পূজা মন্ডবে দূর্গোৎসব চলবে। তন্মধ্যে লালমনিরহাট পৌরসভা এলাকায় মোট ২৬টি, মোগলহাট ইউনিয়নে ২২টি, কুলাঘাট ইউনিয়নে ১০টি, বড়বাড়ী ইউনিয়নে ৯টি, হারাটি ইউনিয়নে ১৪টি, গোকুন্ডা ইউনিয়নে ২০টি, পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নে ২২টি, রাজপুর ইউনিয়নে ৮টি, খুনিয়াগাছ ইউনিয়নে ১৪টি, মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নে ১৬টিসহ লালমনিরহাট সদর উপজেলায় মোট ১শত ৬১টি।
দূর্গাপূর ইউনিয়নে ১১টি, ভেলাবাড়ী ইউনিয়নে ১৩টি, কমলাবাড়ী ইউনিয়নে ১৫টি, সারপুকুর ইউনিয়নে ২২টি, সাপ্টিবাড়ী ইউনিয়নে ৬টি, ভাদাই ইউনিয়নে ৩২টি, পলাশী ইউনিয়নে ১১টি, মহিষখোচা ইউনিয়নে ৪টিসহ আদিতমারী উপজেলায় মোট ১শত ১৪টি।
ভোটমারী ইউনিয়নে ৫টি, মদাতী ইউনিয়নে ১৪টি, তুষভান্ডার ইউনিয়নে ১২টি, দলগ্রাম ইউনিয়নে ৯টি, কাকিনা ইউনিয়নে ৭টি, চলবলা ইউনিয়নে ১৭টি, গোড়ল ইউনিয়নে ১৫টি, চন্দ্রপুর ইউনিয়নে ১২টিসহ মোট কালীগঞ্জ উপজেলায় ৯১টি।
বড়খাতা ইউনিয়নে ৩টি, ফকিরপাড়া ইউনিয়নে ৪টি, গড্ডিমারী ইউনিয়নে ১টি, সিংগিমারী ইউনিয়নে ২টি, টংভাঙ্গা ইউনিয়নে ১৭টি, সিন্দুর্না ইউনিয়নে ৫টি, পাটিকাপাড়া ইউনিয়নে ৩টি, ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়নে ২টি, নওদাবাস ইউনিয়নে ১২টি, গোতামারী ইউনিয়নে ১০টি, ভেলাগুড়ি ইউনিয়নে ১২টিসহ মোট হাতীবান্ধা উপজেলায় ৭১টি।
পাটগ্রাম পৌরসভায় ৪টি, পাটগ্রাম ইউনিয়নে ২টি, শ্রীরামপুর ইউনিয়নে ২টি, বুড়িমারী ইউনিয়নে ১টি, জগতবেড় ইউনিয়নে ৬টি, জোংড়া ইউনিয়নে ৬টি, বাউড়া ইউনিয়নে ৮টি, দহগ্রাম ইউনিয়নে ১টিসহ পাটগ্রাম উপজেলায় মোট ৩০টি পূজা মন্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা পালিত হবে।
দূর্গোৎসব ‘মা’ দূর্গাদেবীর নিকট অসুরশক্তির বিনাস এবং ব্যক্তি, পরিবার তথা দেশ ও জাতির সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করে প্রার্থনা জানানো হবে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ লালমনিরহাট সদর উপজেলা শাখার সভাপতি সুবল চন্দ্র বর্মন, আদিতমারী উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শ্রী তপন কুমার ঘোষ, সভাপতি এস নীল কমল রায়, কালীগঞ্জ উপজেলা শাখার সদস্য সচিব শ্রী অধর চন্দ্র রায়, আহবায়ক শ্রী দুলাল চন্দ্র সাহা, হাতীবান্ধা উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক গজেন্দ্র নাথ বর্মন, পাটগ্রাম উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শ্রী অজিত রঞ্জন রায়, সভাপতি শ্রী রনজিত কুমার সাহা বলেন, আগামী রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) ষষ্ঠী পূজার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে দূর্গা পূজা শুরু হবে। আগামী বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) দশমী ও বিসর্জনের মাধ্যমে শারদীয় পূজা সমাপ্ত হবে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ লালমনিরহাট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ চন্দ্র রায় বলেন, বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গা পূজা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের জন্য সবধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ লালমনিরহাট জেলা শাখার সভাপতি হীরা লাল রায় বলেন, সরকারি নির্দেশনা মেনে এ বছর লালমনিরহাট জেলায় এবারে মোট ৪শত ৬৭টি পূজা মন্ডবে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গা পূজা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সবধরনের প্রস্তুতি হাতে নেওয়া হয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপনের লক্ষে ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার জানান, দুর্গাপূজা উদযাপন উপলক্ষে লালমনিরহাট জেলায় এবার সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশসহ ব্যাপক প্রস্তুতির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ধর্ম যার যার হলেও উৎসব সবার। তিন স্তরবিশিষ্ট নিরাপত্তা বলয় থাকছে এবার দুর্গা উৎসবে। প্রতিটি মণ্ডপে আনসার সদস্য থাকবে। এছাড়াও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনসহ র্যাবের টহল জোরদার করা হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫) বিকালে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনের আয়োজনে আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা-২০২৫ উদযাপন উপলক্ষ্যে প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার-এঁর সভাপতিত্বে এ সময় পুলিশ প্রশাসন, সেনা বাহিনী, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।
সভায় পূজামণ্ডপে সার্বিক নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা রক্ষা, বিদ্যুৎ ও আলো, স্বাস্থ্য সেবা, অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা এবং পর্যাপ্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
প্রতিটি পূজামণ্ডপে পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েনের পাশাপাশি নজরদারির জন্য সিসি ক্যামেরা, মেটাল ডিটেক্টর ও ভিজিল্যান্স টিম সক্রিয় রাখা হবে।
বক্তারা বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই উৎসবকে শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) লালমনিরহাট পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে লালমনিরহাট জেলা পুলিশের আয়োজনে আসন্ন শারদীয় দূর্গাপূজা-২০২৫ উপলক্ষে পূজা উদযাপন কমিটির সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
লালমনিরহাট পুলিশ সুপার মোঃ তরিকুল ইসলাম-এঁর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশ রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আমিনুল ইসলাম। উক্ত সভায় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও লালমনিরহাট জেলার শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন কমিটির সকল নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
লালমনিরহাট পুলিশ সুপার মোঃ তরিকুল ইসলাম বলেন, আসন্ন দুর্গাপূজা উদযাপন লালমনিরহাট জেলায় নির্বিঘ্নে নিছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে সম্পন্ন করতে জেলা পুলিশ কর্তৃক গৃহীত নিরাপত্তা পরিকল্পনা ও আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ে উপস্থিত পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দের সকলকে অবহিত করেন।
বাংলাদেশ পুলিশ রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আমিনুল ইসলাম বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখাসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সমসাময়িক বিষয়ে আলোচনা ও বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করেন এবং শারদীয় দুর্গোৎসব কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই উৎসব মুখর পরিবেশে উদযাপিত হবে মর্মে সকলকে আশ্বস্ত করেন।
উল্লেখ্য যে, দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। পুরোহিতদের মতে, বিশ্ব শান্তির পাশাপাশি মানব কল্যাণে দুর্গার আবির্ভাবে সকল গ্লানিমুক্ত হবে বলে বিশ্বাস তাদের।