লালমনিরহাটে সরকার কর্তৃক সার ও কীটনাশকের নির্ধারিত মূল্যের তোয়াক্কা না করে পতিত ফ্যাসিস্ট সরকার কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত ডিলারগণ কৃত্রিম সার সংকট সৃষ্টি করে দীর্ঘদিন যাবত উচ্চমূল্যে সার বিক্রয় করে এই অঞ্চলের কৃষক সমাজকে প্রতারিত করে আসছে এরই প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (১৩ অক্টোবর) সকাল ১০টা ৩০মিনিটে লালমনিরহাটের মিশন মোড় চত্ত্বরে জাতীয়তাবাদী কৃষক দল লালমনিরহাট জেলা শাখার আয়োজনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
জাতীয়তাবাদী কৃষক দল লালমনিরহাট জেলা শাখার সভাপতি নূরনবী মোস্তফা-এঁর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন কৃষক নুরজামান সরকার, ওমর আলী, একরামুল হক, আব্দুস সালাম, কুদ্দুস, মশিউর রহমান, জাতীয়তাবাদী কৃষক দল বড়বাড়ী ইউনিয়ন শাখার সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, জাতীয়তাবাদী কৃষক দল পাটগ্রাম উপজেলা শাখার সভাপতি আনারুল ইসলাম রবি, জাতীয়তাবাদী কৃষক দল কালীগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি রফিকুল ইসলাম, জাতীয়তাবাদী কৃষক দল আদিতমারী উপজেলা শাখার আহবায়ক শরিফুল ইসলাম মিঠু, জাতীয়তাবাদী কৃষক দল লালমনিরহাট পৌর শাখার আহবায়ক ফেরদৌস আলম, জাতীয়তাবাদী কৃষক দল লালমনিরহাট সদর উপজেলা শাখার আহবায়ক সারওয়ারুল হক লিংকন, জাতীয়তাবাদী কৃষক দল লালমনিরহাট জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক একেএম জাহেরুল ইসলাম দুলু প্রমুখ। এ সময় জাতীয়তাবাদী কৃষক দল জেলা, উপজেলা, পৌর ও ইউনিয়ন শাখার অন্যান্য নেতৃবৃন্দসহ সাধারণ কৃষকগণ উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয়তাবাদী কৃষক দল লালমনিরহাট জেলা শাখার সভাপতি নূরনবী মোস্তফা বক্তব্যে বলেন, ডিলার কর্তৃক সকল প্রকার সার ও কীটনাশক নিয়ে দুর্নীতি, অনিয়মের কিছু তালিকা নিম্নে উল্লেখ করা হলো: ১। বিএডিসি ও বিসিআইসি সকল ডিলারগণ ফ্যাসিস্ট সরকারের দুর্নীতিবাজ প্রশাসন কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত। ফলে তারা বর্তমানে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির লক্ষ্যে সারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করিয়া জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছেন। ২। অধিকাংশ ডিলারগণ সরকারি গোডাউন হইতে সার উত্তোলন না করিয়া উচ্চমূল্যে মজুদদারদের নিকট বরাদ্দপত্র বিক্রয় করিয়া দেন। ৩। যে সকল ডিলারগণ সার উত্তোলন করেন তাহারা উত্তোলনকৃত সার দোকানে প্রদর্শন না করিয়া গোপনে গোডাউনজাত করেন। ৪। পরবর্তীতে কৃষকদের মাঝে সার বিক্রয় না করিয়া উচ্চ মূল্যে খুচরা বিক্রেতাদের মাঝে বিক্রয় করেন। ফলে সাধারণ কৃষকগণ কোন ভাবেই সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যে সার ক্রয় করতে পারে না। ৫। ডিলারদের এই দুর্নীতিতে ইউনিয়ন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাগণ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেন। ৬। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ সাধারণ কৃষকদের সাথে কোনো প্রকার যোগাযোগ রাখেন না। কোন কোন ক্ষেত্রে সাধারণ কৃষকগণ যেগাযোগ করিয়া সহযোগিতা চাইলে বিভিন্ন অজুহাত দেখায়। যাহা দুর্নীতিবাজ ডিলারগণের পক্ষে এবং তাদের স্বার্থ করা হয়। ৭। সরকার কর্তৃক কৃষকদের মাঝে নানা ধরনের প্রণোদনা আসিলে কৃষি কর্মকর্তাগণের মনোনীত দুর্নীতিবাজদের সাথে আতাত করে উক্ত প্রণোদনা আত্মসাৎ করা হয়। ফলে প্রকৃত কৃষকগণ সরকারি প্রণোদনা হইতে বঞ্চিত হন। ৮। কোন কোন ক্ষেত্রে ইহা রেজিস্ট্রেশন বিহীন কোম্পানী কর্তৃক নিম্নমানের কীটনাশক/বালাইনাশক কৃষকদের মাঝে খুচরা বিক্রেতার মাধ্যমে বিক্রয় করে। উক্ত নিম্নমানের কীটনাশক ব্যবহার করে ফলে ফসলের মারাত্মক ক্ষতিসাধন হয়। এসব বিষয়ে কৃষি কর্মকর্তাদের নিকট অভিযোগ করিলেও কোনো রূপ প্রতিকার পাওয়া যায় না। ৯। একই বিষয়ে বীজ কোম্পানীগুলো নিম্নমানের বীজ বাজারজাত করিয়া কৃষকদেরকে ক্ষতিগ্রস্থ করিয়া আসিতেছেন। এ ব্যাপারে কৃষি কর্মকর্তাগণ কোনো রকম দায়িত্ব পালন করেন না এবং ভুয়া কোম্পানীগুলোর বিষয়ে কোন প্রকার পদক্ষেপ গ্রহণ করেন না। ১০। সর্বোপরি সাধারণ কৃষকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট/ভ্রাম্যমান আদালত গঠন পূর্বক দুর্নীতিবাজ ডিলার, বীজ ব্যবসায়ী, কীটনাশক ব্যবসায়ী ও দায়ী কোম্পানীগুলোর বিরুদ্ধে কার্যকরী কোনো ধরনের ব্যবস্থা করেন নাই। উপরোক্ত সমস্যা সমাধানের জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হইলে লালমনিরহাট জেলার সাধারণ কৃষক সমাজকে সঙ্গে নিয়ে আগামী দিনে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। যার দায়ভার জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে বহন করিতে হইবে।
এর আগে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে উচ্চ মূল্যে দুর্নীতিবাজ ডিলার কর্তৃক রাসায়নিক সার ও বীজ বিক্রয়ের প্রতিবাদে ইউনিয়ন ও উপজেলা থেকে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের মিছিল লালমনিরহাটের মিশন মোড় চত্ত্বরে মানববন্ধনে এসে মিলিত হয়।