শিরোনাম :
সাপ্তাহিক আলোর মনি পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। # সারাবিশ্বের সর্বশেষ সংবাদ পড়তে আমাদের সঙ্গেই থাকুন। -ধন্যবাদ।
শিরোনাম :
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী গরু বা মহিষের গাড়ি বিলুপ্তির পথে

গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী গরু বা মহিষের গাড়ি বিলুপ্তির পথে

দেশের উত্তরের সীমান্তবর্তী অন্যান্য জেলার মতো লালমনিরহাটের গ্রামীণ জীবনের এক সময়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচিত ছিল গরু বা মহিষের গাড়ি। ধান-পাট বহন, মালামাল পরিবহন কিংবা মানুষের যাতায়াতসহ সবক্ষেত্রেই এটি ছিল গ্রামের অপরিহার্য বাহন। তাইতো মানুষের মুখে মুখে জনপ্রিয় গান ছিলো- আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে…। আজও সেই সময়ের স্মৃতিকে জাগ্রত করে মানুষকে।

 

উত্তরের জেলাুলোতে এক সময় মেঠোপথে প্রধান পরিবহন হিসেবে ব্যবহৃত হতো গরুর বা মহিষের গাড়ি। বিয়ের যাত্রা থেকে কৃষিপণ্য আনা-নেওয়া সবক্ষেত্রেই এর ব্যবহার ছিল অপরিসীম। তবে যান্ত্রিক যুগের বিকাশের সাথে সাথে এই ধীরগতির, পরিবেশ বান্ধব বাহনটি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে।

 

তথ্য পর্যালোচনা অনুযায়ী, প্রায় ৪হাজার বছর আগে প্রাচীন মেসোপটেমিয়ায় প্রথম চাকাওয়ালা গাড়ির ব্যবহার শুরু হয়। পরে সিন্ধু সভ্যতা ও ভারতীয় উপমহাদেশেও গরু বা মহিষের গাড়ি পরিবহনের অন্যতম বাহন হিসেবে জনপ্রিয়তা পায়।

 

লালমনিরহাটের খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের রমজান আলী বলেন, দুই যুগ আগে গরু বা মহিষের গাড়ি ছাড়া বিয়ে হতো না। বরযাত্রা, মাল পরিবহন সবকিছুতেই গরু বা মহিষের গাড়ি ছিল অপরিহার্য। গ্রামের যেসব পরিবারে গরুর গাড়ি ছিল, তাদের কদরও বেশি। এখনও আমাদের গ্রামের অনেক এলাকায় মাঝে মাঝে গরু বা মহিষের গাড়ি চোখে পড়ে, যা স্মৃতি হিসেবে মনের গভীরে নাড়া দেয়।

 

আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের কৃষক আজগার আলী বরেন, এখনও মাঝে মাঝে কৃষি কাজে গরু বা মহিষের গাড়ির ব্যবহার হয়। গ্রামীণ সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে গরু বা মহিষের গাড়ি নিয়ে ভাওয়াইয়া গানও- ওকি গাড়িয়াল ভাই কিংবা আস্তে বোলাও গাড়ি…। এসব লোকগীতি আজও মানুষের আবেগকে নাড়া দেয়।

 

আধুনিক মোটরযানের কারণে গরু বা মহিষের গাড়ির ব্যবহার এখন নেই বললেই চলে।

 

লালমনিরহাটের বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাসুদ রানা বিপ্লব বলেন, কৃষি নির্ভর জনপদে এক সময় গরু বা মহিষের গাড়িই ছিল মানুষের প্রধান ভরসা। এখন যন্ত্রচালিত যানবাহনের কারণে এটি শুধু ইতিহাস হয়ে আছে।

 

মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের কৃষক আবু সালাম, ইব্রাহিম হক বলেন, ধান কাটা থেকে বিয়ের যাত্রা সব কিছুতেই গরু বা মহিষের গাড়ি ব্যবহার হতো। এটি সম্পূর্ণ জ্বালানি মুক্ত, দূষণহীন ও দুর্ঘটনাহীন পরিবহন।

 

সাংবাদিকরা বলেন, এখন গ্রামের অনেক শিশু জানেই না গরু বা মহিষের গাড়ি দেখতে কেমন। লোকজ মেলা বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রদর্শন হলেও তা কেবল ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা মাত্র।

 

উল্লেখ্য, ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হলেও গরু বা মহিষের গাড়ির স্বর্ণালী দিনগুলো আজও স্মৃতির পাতায় জীবন্ত হয়ে থাকবে লালমনিরহাটের মানুষের মনে।

সংবাদটি শেয়ার করুন




এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
Design & Developed by Freelancer Zone