লালমনিরহাটের তিস্তা নদীর পানি ১০সেন্টিমিটার থেকে ১৫সেন্টিমিটার কমে এবং বাড়ে, টানা ১০দিন ধরে এমন পরিস্থিতির পর আবারও বিপদসীমার ৪সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে তিস্তা নদীর তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের প্রায় ২০হাজার মানুষ আবারও পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
বুধবার (১৩ আগস্ট) বিকাল ৩টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় পানির সমতল ৫২দশমিক ১৯মিটার (বিপদসীমা ৫২দশমিক ১৫মিটার) যা বিপদসীমার ৪সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কাউনিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় পানির সমতল ২৯দশমিক ০৫মিটার (বিপদসীমা ২৯দশমিক ৩০মিটার) যা বিপদসীমার ২৫সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি বৃদ্ধির এ হার বর্তমানে স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। আগামী ২/৩ দিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, কাকিনা, হাতীবান্ধা উপজেলার সিন্ধুর্ণা, গড্ডিমারী, ডাউয়াবাড়ি এবং পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়নের অন্তত ২০হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। বিশেষ করে এসব এলাকার চরাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার উপক্রম হয়েছে বহু কাঁচা-পাকা সড়কে পানি উঠে পড়ায়।
স্থানীয়রা জানান, গত ২৪ঘন্টার ভারী বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর আগে গত সপ্তাহে তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। যা ক্রমে কমে গিয়ে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি ঘটে। কিন্তু এক সাপ্তাহে না যেতেই ফের উজানের ঢল ও ভারী বর্ষণের কারণে তিস্তার পানি আবার বাড়ছে।
এছাড়া তিস্তা ও ধরলার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সৃষ্ট বন্যায় চরাঞ্চলের সবজি, বাদামসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা। অনেক মৎস্য খামারের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। ফসলের ক্ষেত বন্যার পানিতে ডুবে গিয়ে ফসলহানীর শঙ্কায় চিন্তিত কৃষকরা। তিস্তার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের পানিবন্দি পরিবারগুলো শিশু-বৃদ্ধ ও গবাদি পশু-পাখি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।
দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ রায় বলেন, উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি প্রবাহ মঙ্গলবার রাত থেকে আবারও বেড়েছে। ব্যারাজ রক্ষার্থে সবগুলো জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে ধারণা করা হচ্ছে, দুই থেকে তিনদিনের মাথায় পানির প্রবাহ কমে যেতে পারে।
এদিকে বুধবার (১৩ আগস্ট) বিকাল ৩টায় ধরলা নদীর শিমুলবাড়ি পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় পানির সমতল ৩০দশমিক ৪৩মিটার (বিপদসীমা ৩০দশমিক ৮৭মিটার) যা বিপদসীমার ৪৪সেন্টিমিটার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পাটগ্রাম পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় পানির সমতল ৫৭দশমিক ৫২মিটার (বিপদসীমা ৬০দশমিক ৩৫মিটার) যা বিপদসীমার ২৮৩সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
লালমনিরহাটের ধরলা নদীর ভাঙনে মোগলহাট ইউনিয়ন ছাড়াও লালমনিরহাট সদর উপজেলার আরও ২টি (কুলাঘাট ও বড়বাড়ী) ইউনিয়নে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধরলা নদী পাড়ে হু হু করে পানি বেড়ই চলছে। হঠাৎ এ পানি বৃদ্ধি পাওয়ার লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার দূর্গাপুর ইউনিয়ন ও লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট, কুলাঘাট, বড়বাড়ী এবং কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ডুবে গেছে বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাটসহ সবজির খেতসহ বিভিন্ন উঠতি ফসল।
উল্লেখ্য যে, লালমনিরহাটের তিস্তা, ধরলা, রত্নাই, স্বর্ণামতি, সানিয়াজান, সাকোয়া, চাতলা, মালদহ, ত্রিমোহীনি, মরাসতি, গিরিধারী, গিদারী, ধোলাই, শিংগীমারী, ছিনাকাটা, ধলাই ও ভেটেশ্বর নদীতে বন্যার পানি বৃদ্ধির ফলে কৃষকের স্বপ্ন ভঙ্গের খবর পাওয়া গেছে।