শিরোনাম :
সাপ্তাহিক আলোর মনি পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। # সারাবিশ্বের সর্বশেষ সংবাদ পড়তে আমাদের সঙ্গেই থাকুন। -ধন্যবাদ।
শিরোনাম :
ইংরেজিতে লেখা “ইউএনও কালীগঞ্জ লালমনিরহাট” সরকারি ফেসবুক আইডি নয় বরং আওয়ামী লীগের প্রচার শেল

ইংরেজিতে লেখা “ইউএনও কালীগঞ্জ লালমনিরহাট” সরকারি ফেসবুক আইডি নয় বরং আওয়ামী লীগের প্রচার শেল

ইংরেজিতে লেখা ইউএনও কালীগঞ্জ লালমনিরহাট “Uno Kaliganj Lalmonirhat” এই সরকারি ফেসবুকটি যে কেউ ঢুকলে এখনও যে সব স্ট্যাটাস, ছবি ও ভিডিও চিত্র দেখতে পাবেন, তাতে এটিকে সরকারি কোনো কর্মকর্তার ফেসবুক আইডি নয় বরং আওয়ামী লীগের প্রচার শেল মনে হবে।

 

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়েও ইউএনও কালীগঞ্জ লালমনিরহাট নামের সরকারি ফেসবুক আইডিতে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের এসব নিদর্শন দেখে বীর মুক্তিযোদ্ধা, লেখক, কলেজ শিক্ষক, গবেষক, নারী অধিকার সংগঠক মন্তব্য করেছেন যে, সরকারি ফেসবুক আইডিগুলো মনিটরিং করা হয় না, এতে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার আমলের পালিয়ে যাওয়া পেৎআত্মার ছোঁয়া রয়ে গেছে।

 

তারা বলেন, এসব দেখে যে কেউ মনে করতে পারেন যে, লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) সরকারি ফেসবুক আইডিটি যেন লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার শেল…।

 

এর অধিকাংশ স্ট্যাটাস, স্থির চিত্র ও ভিডিও চিত্র ট্যাগ এবং শেয়ার/ পোস্ট করা হয়েছে তৎকালীন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জহির ইমামের সময় ২০২৩ সাল থেকে ২০২৪ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত। কালীগঞ্জের তৎকালীন ইউএনও জহির ইমাম বদলি হয়ে যাওয়ার পর একই পদে সিফাত আনোয়ার তুম্পা ও জাকিয়া সুলতানা কালীগঞ্জে বদলি হয়ে আসেন। এ দুই ইউএনওর সময়ও ফেসবুকটির কোনো পরিবর্তন হয়নি, নতুন কিছু ছবি, ভিডিও চিত্র ও স্ট্যাটাস যোগ হওয়া ছাড়া।

এদিকে ২০২৩ ও ২০২৪ সালে এবং অন্যান্য সময়ে ইউএনও কালীগঞ্জ, লালমনিরহাট নামের ফেসবুক আইডিতে থাকা এ সংক্রান্ত পোস্টগুলো এখনও ডিলিট করা হয় নি।
২০২৩ সালের ১ আগস্ট তারিখে পোস্ট করা হয় দেশরত্ন শেখ হাসিনার রংপুর শুভাগমন উপলক্ষে ছবিসহ।
একই সালের ৩১ আগস্ট পোস্ট করা হয়, কালীগঞ্জ নেসকো অফিসে হামলায় মন্ত্রীর ছেলের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় নি। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ।
একই সালের ৭ সেপ্টেম্বর পোস্ট করা হয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর বাড়িতে ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিল-সন্মানহানীর উদ্দেশ্যে প্রপাকান্ডা। মন্ত্রীর ছবিসহ পোস্ট। ৮ সেপ্টেম্বর একই ধরনের পোস্ট দেওয়া হয়।
উল্লেখ যে, তৎকালীন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, পুত্র রাকিবুজ্জামান আহমেদ, ভাই শামসুজ্জামান আহমেদ ও প্রয়াত পিতা করিম উদ্দিন আহমেদ এর নামে কয়েক বছরের কয়েক লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকার সংবাদ প্রথম আলো, ডেইলি স্টারসহ একাধিক জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়।

একই সালের ৯ সেপ্টেম্বর পোস্ট করা হয়: হাজারও ষড়যন্ত্র করে আওয়ামী লীগের উন্নয়ন থামানো যাবে না: সমাজকল্যাণ মন্ত্রী। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদটি।
১৫ সেপ্টেম্বর পোস্ট করা হয়, কালীগঞ্জে বিএনপির ৯৭জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে পুলিশের মামলা।
২২ সেপ্টেম্বর পোস্ট করা হয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ কে কালীগন্জের একটি অন লাইন নিউজ পোর্টালের পক্ষ থেকে দেওয়া ক্রেস্ট প্রদানের ছবি।
২৬ সেপ্টেম্বর পোস্ট করা হয়, লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের একটি অনুষ্ঠানের ছবি।
১৩ অক্টোবর পোস্ট করা হয়, বিএনপি জামায়াতের মুরোদ কতটুকু জানা আছে- সমাজকল্যাণ মন্ত্রী। শিরোনামে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ।
১৯ অক্টোবর পোস্ট করা হয়, এতই যদি জনপ্রিয় হন, তাহলে নির্বাচনে এসে যাচাই করুন: সমাজকল্যাণ মন্ত্রী। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ।
একই দিন পোস্ট করা হয়: উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকায় ভোট দিতে হবে- সমাজকল্যাণ মন্ত্রী। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ।
১১ নভেম্বর পোস্ট করা হয়, কালীগঞ্জে যুব লীগের ৫১তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালনের ছবি।
২৬ নভেম্বর পোস্ট করা হয়, লালমনিরহাট-২ কালীগঞ্জ-আদিতমারী নৌকার মাঝি নুরুজ্জামান আহমেদ। ছবিসহ।
একই দিন পোস্ট করা হয়, লালমনিরহাটের ৩টি সংসদীয় আসনের নৌকা মার্কার প্রার্থীদের ছবিসহ পোস্টার।
৩০ নভেম্বর পোস্ট করা হয়, নুরুজ্জামান আহমেদের মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার ছবি।
২০২৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর পোস্ট করা হয়, নুরুজ্জামান আহমেদকে নৌকা মার্কার পোস্টার, ভোট দেওয়ার আহবান জানানো হয়।
১৯ ডিসেম্বর নুরুজ্জামান আহমেদের আনন্দ শোভাযাত্রার ছবি।
২১ ডিসেম্বর পোস্ট করা হয়, আওয়ামী লীগের প্রার্থী নুরুজ্জামান আহমেদের নির্বাচনী সভার ছবিসহ পোস্ট।
২০২৪ সালের ২ জানুয়ারি পোস্ট করা হয়, আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী নুরুজ্জামান আহমেদকে ভোট দেওয়ার আহবান জানিয়ে নির্বাচনী পোস্টার।
৩ জানুয়ারি পোস্ট করা হয়, আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী নুরুজ্জামান আহমেদের নির্বাচনী জনসভার ছবি।
৪ জানুয়ারি পোস্ট করা হয়, নুরুজ্জামান আহমেদের সর্বশেষ নির্বাচনী জনসভার ছবি।
২০২৪ সালের ৭ মার্চ পোস্ট করা হয়, আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নুরুজ্জামান আহমেদ লালমনিরহাট-২ (আদিতমারী-কালীগঞ্জ) আসন থেকে তৃতীয়বারের মতো এমপি হওয়ায় বিজয় সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি।

 

কালীগঞ্জের নারী অধিকার সংগঠক এস তাবাসসুম রায়হান মুসতাযীর বলেন, যখন আওয়ামী লীগের ধ্যান ধারণার পোস্ট গুলো একটি সরকারি ফেসবুকে এভাবে ট্যাগ দেওয়া হয় এবং সেগুলো সরিয়ে বা মুছে ফেলা হয় না, তখন বুঝতে হবে, প্রশাসনের বদ্ধ মূল ধারণা ছিলো যে, আওয়ামী লীগ কখনো ক্ষমতার বাইরে যাবে না। কিন্তু ২০২৪ সালের জুলাই আগস্টের গণঅভ্যুত্থান সেই ধ্যান ধারণার পতন ঘটিয়েছে।

 

স্থানীয় লেখক, গবেষক ও কলেজ শিক্ষক মোঃ হাসানুজ্জামান জুয়েল বলেন, প্রশাসনের সরকারি ফেসবুক আইডিতে এ ধরনের রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত স্ট্যাটাস, ছবি ও ভিডিও চিত্র ট্যাগ বা পোস্ট করার পর, সেগুলো দেখেও ডিলিট না করাটা তৎকালীন কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন ও কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ তথা তৎকালীন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ ও মন্ত্রী পুত্র রাকিবুজ্জামান আহমেদের সাথে এক ধরনের সখ্যতা ও নির্ভরশীলতার নিদর্শন হিসেবে মনে হয়। এ ধরনের পোস্ট গুলো কালীগঞ্জ ইউএনওর ফেসবুকে দেখতে পেয়েছি, অবাক হয়েছি, সেগুলো এখনো রয়েছে দেখে।

 

তিনি বলেন, কালীগঞ্জ ইউএনওর সরকারি ফেসবুক আইডিটিকে আওয়ামী লীগের প্রচার শেল মনে হয়েছে, যারা দেখেছেন বা দেখবেন তাদেরও তাই মনে হবে।

 

এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ জাকিয়া সুলতানার বক্তব্য জানা যায়নি।

সংবাদটি শেয়ার করুন




এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
Design & Developed by Freelancer Zone