লালমনিরহাটের তিস্তা নদীর পানি সোমবার (৬ অক্টোবর) সকাল থেকে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। এর আগে রোববার (৫ অক্টোবর) সন্ধ্যার পর হতে বিপদসীমার ৩৩সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার কারণে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি গেট খুলে দেওয়া হয়। ফলে নদী তীরবর্তী ও তার আশপাশের এলাকায় জারি করা হয়েছে রেড অ্যালার্ট। স্থানীয়দের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে করা হয়েছে মাইকিং। লালমনিরহাট জেলার ৫টি উপজেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলগুলোতে দেখা দেয় বন্যা। ফলে রোববার (৫ অক্টোবর) রাত হতে ঘর-বাড়িগুলোতে পানি প্রবেশ করতে শুরু করে। ডুবে গেছে রাস্তা-ঘাট, আবাদী ফসলসহ অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পানি উঠায় পাঠ দান বন্ধ রয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ।
ভারতের গজলডোবা ব্যারাজের সব গেট খুলে দেওয়ায় এবং গত কয়েকদিন ধরে অতি বর্ষণের ফলে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত হলে ক্ষতির আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা।
রোববার (৫ অক্টোবর) সন্ধ্যা থেকে বাড়তে শুরু করে নদীর পানি। রাত ৯টার দিকে ডালিয়া পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৩সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত শুরু করে। এদিকে তিস্তার প্রবল স্রোত সামাল দিতে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় অবস্থিত দেশের সবচেয়ে বড় সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে ৪৪টি জলকপাট খুলে দিয়েও পানি নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খাচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তা নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। ডুবে গেছে ফসলের ক্ষেত। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন এসব এলাকার চাষিরা।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার রাজপুর ইউনিয়নের নজমুল হোসেন বলেন, আমরা নদীপাড়ের মানুষ চরম আতঙ্কে আছি। ভারত থেকে প্রচণ্ড গতিতে পানি বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে। যে কোনো সময় আমাদের ঘর-বাড়ি তিস্তার পানিতে ডুবে যেতে পারে। প্রতিবছর আমরা এই ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
একই এলাকার আনোয়ারুল ইসলাম বরেনন, গ্রামে যতোটুকু আবাদ করেছি সেটুকু এই পানির স্রোতের ভেসে গেছে। এখন ঘর-বাড়িতে পানি খাদ্য সংকটে পড়তে হবে। সরকার যদি এই মুহূর্তে ব্যবস্থা না গ্রহণ করে তাহলে আমাদেরকে না খেয়ে মরতে হবে ইতিমধ্যে অনেকেই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে উঁচু এলাকায় আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। কেউ আবার ভেলা বানিয়ে খুঁজছেন নিরাপদ আশ্রয়। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পানি ওঠার কারণে পাঠ দান বন্ধ রয়েছে।
তিস্তা ব্যারাজ কন্ট্রোল রুম ইনচার্জ নুরুল ইসলাম বলেন, রোববার (৫ অক্টোবর) সন্ধ্যা থেকে তিস্তা নদীর পানি বিপদে সীমার ৩৩সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও সোমবার (৬ অক্টোবর) সকাল থেকে পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে যেকোনো সময় আবারও তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে তিনি।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার রায় বলেন, রাত ৯টায় তিস্তার পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৩সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। সোমবার সকাল থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। বন্যা ভাঙ্গণ রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড সকল ধরনের প্রস্তুতি হাতে রেখেছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য জেলার ৫টি উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে শুকনা খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।