শিরোনাম :
সাপ্তাহিক আলোর মনি পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। # সারাবিশ্বের সর্বশেষ সংবাদ পড়তে আমাদের সঙ্গেই থাকুন। -ধন্যবাদ।
শিরোনাম :
লালমনিরহাটে আমন চাষাবাদে বাম্পার ফলনের আশা কৃষকদের! স্বাধীনতার ৫৩বছর পেরিয়ে গেলেও লালমনিরহাটের খোরারপুলে হয়নি সেতু! লালমনিরহাটে মানব পাচার প্রতিরোধ কমিটির সদস্যদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কর্মশালা অনুষ্ঠিত হাত বদলে বাড়ে সবজির দাম; বঞ্চিত হন লালমনিরহাটের চাষিরা! ছাত্রদলের নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজি; মুছলেকা দিয়ে ছাড়া পেলো যুবক! বিজিবি ও ছাত্রজনতা স্বেচ্ছাশ্রমে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সীমান্ত রাস্তা মেরামত! লালমনিরহাটের চাষীদের বাদাম চাষে আগ্রহ বাড়ছে লালমনিরহাট জেলা ছাত্র কল্যাণ সমিতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর শুভেচ্ছা ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত লালমনিরহাটে বিলুপ্তির পথে মাষকলাই (ঠাকরি কালাই) চাষ! লালমনিরহাটে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে জনসচেতনতা মূলক নাটক প্রদর্শন অনুষ্ঠিত

টেবিল টক

সাকি:

“টমাস বাড়ৈ”

২২ শে মার্চ ২০২০

দাদাবাবু পরলোক গমন করেছেন। ৭৯বছর বেঁচে থাকা এই মানুষটির সাথে প্রথম দেখা হয়েছিলো ১৯৭৩ এর কোন এক বিকেলে।

পাকিস্তান থেকে মুক্তিযুদ্ধের পর বাঙ্গালী প্রত্যাবাসনের নিয়মে, বাংলাদেশে ফিরে, স্ত্রী পুত্র কন্যা নিয়ে লালমনিরহাট আসেন। তাঁর শ্বশুড়  লালমনিরহাট মিশন স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। বীরেন্দ্রনাথ বাড়ৈকে অবাঙ্গালীরা নির্মম ভাবে হত্যা করে, মিশন স্কুলের পুকুরের দক্ষিণ দিকের জমিতে ফেলে রেখেছিলো, যার কঙ্কাল তার পুত্র বাবুয়া মুক্তিযুদ্ধের পর দাঁত দেখে সনাক্ত করেছিলো। বাড়ৈ বাবু, স্ত্রী, পাঁচ কন্যা ও পাঁচজন পুত্র সন্তান রেখে মৃত্যুবরণ করেন।

দাদাবাবু দেশে ফিরে নিজের মিশনারির চাকরীর পাশাপাশি, এক বিশাল গুরুদায়িত্ব তাঁর মাথায় নেন।

দেখেছি – তাঁর চারজন শ্যালিকাকে ঢাকায় তাঁর বাসায় রেখে, পড়ানো, বিবাহের ব্যবস্থা করেছিলেন। তাঁর এক কন্যা ও দুইপুত্র নিয়ে ছিলো শান্তিময় সংসার।

মঞ্জুদিকে দেখেছি, সংসার সামলিয়ে, কিভাবে বিএ, এমএ, এমএড করে প্রভাতী বিদ্যানিকেতনে বহুদিন শিক্ষকতা করেছেন, পরে ওয়াই.ডাব্লিউ.সি.এ স্কুল এর অধ্যক্ষ হয়ে অবসরে যান।

তাঁদের বন্ধু-বান্ধব খুবই সুন্দর সব মানুষছিলো।বিশেষ করে, বড়দিনের আনন্দ উৎসবে দাদাবাবুর সাথে অনেক স্মৃতি বিজড়িত সন্ধ্যা কাটিয়েছি, যা আজো স্মৃতির মনিকোঠায় সমুজ্জল।

সিসিডিবিতে দাদাবাবু টমাস বাড়ৈ দীর্ঘদিন নানান পদে কাজ করেছেন এবং শেষের দিকে এর চেয়ারম্যানও ছিলেন।তিনি একজন মিতভাষী, শান্ত, হাসিময় চরিত্রের মানুষ ছিলেন। তাঁর সন্তানেরা সবাই আমেরিকা কানাডায় অবস্থানের কারনে, জীবনের শেষদিন গুলোতে নিঃসঙ্গতা তাঁকে ও মঞ্জুদিকে খুবই পীড়া দিতো।

 

মঞ্জুদি চোখ ও ডায়াবেটিস এর কারনে এবং দাদাবাবু কিডনীর সমস্যায় খুবই কাতর ছিলেন।

ডায়ালাইসিস করে তাঁর জীবনের শেষ দিনগুলো, কাটিয়েছেন দাদাবাবু।

ওনাকে শেষবার যখন দেখি ঢাকার হাসপাতালে, তখন আমাকে দেখে, শিশুর মতোন কেঁদে উঠেছিলেন।

সে কান্না আমার কানে প্রতিনিয়ত বাজে।

 

আসলেই মৃত্যু মানুষের সকল জাগতিক সমস্যার সমাধান করে দেয়।

২২ শে মার্চ ২০২০ ভোরে মঞ্জুদির টেলিফোনে ঘুম ভাংলো।

সাকি তোমার দাদাবাবু আর নেই।

কতো সহজে চলে গেলেন দাদাবাবু।

পিছনে ফেলে গেলেন, কান্ডারী বিহীন একটা সংসার, মঞ্জুদির একাকীত্ব,

আর অসহায়তা।

 

সবার জীবনে একটা এমন সময় আসবে, যখন মানুষ আপনজনদের কাছে পেতে চায়। কিন্তু বিরাট একটা সংসারের মানুষ হয়েও, কেন যেনো সহৃদয়তার ঘাটতি দেখে মনটা বিষন্ন হয়ে আসে।

 

আসলেই সংসারে আমরা সবাই একা।

জন্মেছি একা, যেতেও হবে একা।

দাদাবাবুর শেষ কৃত্যে থাকতে পারিনি, দিদিকে সান্তনা দেবার জন্য, সামনে যেয়ে দাঁড়াতে পারিনি,

শুধু মনে হয়েছে, একজন মানুষ যিনি লালমনিরহাটকে এতো ভালোবাসতেন, আমাকে দেখলেই বলতেন আবার লালমনিরহাট যেতে চাই, এতো ভালোবাসতেন লালমনিরহাট কিন্তু তার প্রতিদানে আমার নিজের অসুস্থ্যতার কারনে, তাঁর জন্য কিছুই করতে পারলাম না। মঞ্জুদির কাছে করজোড়ে ক্ষমা প্রার্থী, তাঁর জীবনে অসংখ্য ছুটির দিনগুলোতে, তাঁর হাতের রান্না খাবার লোভে ছুটে যেতাম,

বড়ো বেশী স্নেহ করতেন আমাকে,

পরবাসী হয়ে, বহুদুরে অবস্থানের কারনে, জীবনের সবচেয়ে নিদানের সময় কোন কাজে আসলাম না দিদি দাদাবাবু।

একান্নবর্তী সংসারের কনসেপ্ট ভেঙে গেছে অনেক আগে, কিন্তু আমরা একা বাঁচতে শিখিনি।

আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম হয়তো পারবে, কিন্তু আমরা, নিঃসঙ্গ অনুভব করি।

কোথাও যেনো হারিয়ে যাবার ভয়।

একদিন মৃত্যু এসে আমাদের সবাকে একই সমতলে নিয়ে যাবে, সেই ক’টা দিন কষ্ট।

যেখানেই থাকেন ভালো থাকেন, দাদাবাবু টমাস বাড়ৈ।

হয়তো আকাশের নভোনীলে কোথাও আমাদের দেখা হতে পারে।

তখন আমরা কি কথা বলবো!

 

বাইশে মার্চ

টমাস বাড়ৈ’ কে

তার মহাপ্রয়ানের প্রথম বর্ষতে ডা. জাকি নিবেদিত

স্মরনের নৈবেদ্য।

 

টিনটন ফলস্,

নিউজার্সি, আমেরিকা।

সংবাদটি শেয়ার করুন




এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
Design & Developed by Freelancer Zone