শিরোনাম :
সাপ্তাহিক আলোর মনি পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। # সারাবিশ্বের সর্বশেষ সংবাদ পড়তে আমাদের সঙ্গেই থাকুন। -ধন্যবাদ।
শিশু চুরি, উদ্ধার ১৭৪দিন পর, মামলা হলো না থানায়!

শিশু চুরি, উদ্ধার ১৭৪দিন পর, মামলা হলো না থানায়!

আলোর মনি ডটকম ডেস্ক রিপোর্ট: ৪ সন্তানের জননী শিল্পী বেগম (৩৫) স্বামী খোরশেদ আলম, পেশায় কুড়িগ্রাম শহরের একজন ফেরিওয়ালা। তার বাড়ি লালমনিরহাট পৌরসভাধীন ১নং ওয়ার্ডের বানভাষা মোড় এলাকায়। হতদরিদ্র পরিবারের স্বামীর আয়ের টাকা দিয়ে ৬সদস্যর সংসার কোন ভাবেই চলতো। তারপরও অভাব অনটন লেগেই থাকত। তাই শিল্পী বেগম এলাকাবাসীর নিকট থেকে গাভীর দুধ সংগ্রহ করতেন। সেই গাভীর দুধ একই ওয়ার্ডের বত্রিশ হাজারী এলাকার আনোয়ারুল বিদেশীর বাড়িসহ বেশকিছু বাড়িতে নিয়মিত দুধ দিতেন। মাস শেষে দুধের টাকা উত্তোলন করতেন। এতে যা আয় হতো তা সংসারের কাজে লাগত। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আনোয়ারুল বিদেশীর একটি নিকটতম আত্মীয় যার বাড়ি লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের সাতপাটকী এলাকার সম্ভ্রান্ত পরিবার। ওই পরিবারের একটি মেয়ে সন্তানের দরকার ছিল। কিন্তু ৪সন্তানের জননী শিল্পী বেগমের ৪র্থ সন্তানের গর্ভবস্থা থাকাকালীন সময় থেকে তার কাছে সন্তান দত্তক চায় ওই বিদেশী পরিবার। এতে রাজি হয়নি ৪সন্তানের জননী শিল্পী বেগম। তখন বিদেশী পরিবারটি শিল্পীকে সন্তান বিক্রি করতে টাকার প্রলোভন দেখান। তাতেও তিনি রাজি হননি সন্তান বিক্রির জন্য। এর মাঝে শিল্পী বেগমের ৪র্থ সন্তান প্রসবের বেদনায় অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। শিল্পী’র অসুস্থ্যতার খবর তার স্বামীকে না দিয়ে গত ০৯/০৯/২০২০ইং তারিখে ওই বিদেশী পরিবারটি শিল্পীর অভিভাবক সেজে লালমনিরহাট শহরের মিশন মোড়স্থ বৈশাখী ক্লিনিকে ভর্তি করান। ওই ক্লিনিকের রেকর্ড অনুযায়ী শিল্পী বেগম ওই দিন সিজারের মাধ্যমে একটি কন্যা সন্তান জন্ম দেন। জন্মধারীনি মা সুস্থ্য হওয়ার পর থেকে দেখেন তার কাছে সন্তান নেই। দুঃখিনী মা ক্লিনিক থেকে বাড়ি ফিরেন সন্তান ছাড়া খালি হাতে। এর মধ্যে শিল্পীর স্বামী কুড়িগ্রাম থেকে বাড়িতে আসেন। দেখেন তার স্ত্রী কাছে সদ্য ভুমিষ্ট সন্তান নেই। সন্তানের কথা জানতে চাইলে শিল্পী কোন উত্তর দিতে পারেননি স্বামীকে। শুধু কান্নাই করতে থাকেন। এনিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে প্রায় ঝগড়া লেগেই থাকত। অনেক চেষ্টা করার পরেও একনজর সন্তানকে দেখতে বার বার ওই বিদেশীর বাড়ি যাওয়া আর আসার মাঝে কেটে যায় দীর্ঘ ৫মাস ২৪দিন। অর্থাৎ ১শত ৭৪দিন পর একজন সমাজকর্মী জয়িতা ও প্রশাসনের সহযোগিতায় সন্তান ফিরে পেলেন মা শিল্পী বেগম।

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) রাত ৯টায় লালমনিরহাট সদর থানা পুলিশ সন্তানটিকে উদ্ধার করে শিল্পী বেগমের হাতে তুলে দেন।

অশ্রুসিক্ত নয়নে শিল্পী বেগম সাংবাদিকদের জানান, রহস্যজনক কারণে ১শত ৭৪দিন পর চুরি যাওয়া শিশুটি উদ্ধারের ঘটনায় কোন মামলা হয়নি। ফলে তারা আবারও আমার বাড়িতে এসে সন্তানটি জোড় করে নেওয়ার পায়তারা করছেন। সন্তান ফিরে পেয়ে মা শিল্পী বেগম সাংবাদিকদের বলেন, আমি আমার সন্তান (পোষানী) দত্তক দেয়নি। আনোয়ারুল বিদেশী চেয়েছিল, আমি রাজি হয়নি। আমি ক্লিনিকে অসুস্থ্য থাকাবস্থায় আমার বাচ্ছাটিকে নিয়ে গেছে। পরে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সমাজকর্মী জয়িতা রুকশাহানারা সুলতানা মুক্তা আপার সহযোগিতায় আজকে আমার হৃদয়ের শূন্যতা পূরণ হলো। আমার সন্তানকে ফেরত পেলাম। আমার যে আজকে কত খুশি সেটা বলে বুঝাতে পারবো না। ওই সময় উপস্থিত ছিলেন লালমনিরহাট সদর থানার অফিনার ইনচার্জ শাহা আলম, লালমনিরহাট পৌরসভা ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোকছেদুর রহমান মুকুল, সমাজকর্মী জয়িতা রুকশাহানারা সুলতানা মুক্তাসহ অনেকেই।

সমাজকর্মী জয়িতা রুকশাহানারা সুলতানা মুক্তা সাংবাদিকদের বলেন, এর আগে এক ছাত্রীর সহযোগীতায় ৪সন্তানের জননী মোছাঃ শিল্পী বেগমের সদ্য ভুমিষ্ট সন্তান ক্লিনিক থেকে চুরি যাওয়ার বিষয়টি আমাকে জানান। বিষয়টি শুনে আমি অবাক। আমার সহযোগীতায় শিল্পী বেগম বাদী হয়ে ২৭/০৩/২১ইং তারিখে লালমনিরহাট সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অবশেষে বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) লালমনিরহাট সদর থানা পুলিশ মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের সাতপাটকী এলাকা একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারের নিকট থেকে শিশু সন্তানটিকে উদ্ধার করেন। তবে, কার নিকট থেকে সন্তানটিকে উদ্ধার করা হয়েছে তাদের নাম ও ঠিকানা জানায়নি প্রশাসন। সমাজকর্মী জয়িতা মোছাঃ রুকশাহানারা সুলতানা মুক্তা সাংবাদিকদের আরও বলেন, আমি যখন খোঁজ পাই একজনের সন্তান অন্যজন অবৈধভাবে নিয়েছে। সেটা আমার হৃদয়ে আঘাত হানে। তখন থেকে সন্তানকে তার নিজের মায়ের কাছে ফেরত দেওয়ার জন্য কার্যক্রম শুরু করি। অবশেষে ১শত ৭৪দিন পর প্রশাসনের সহযোগীতায় সন্তান ফিরে পেলেন এক অসহায় মা শিল্পী বেগম। এটাই আমার কাজের স্বার্থগতা।

লালমনিরহাট সদর থানার অফিসার ইনচার্জ শাহা আলম সাংবাদিকদের বলেন, বাচ্চা চুরি কোন ঘটনা ঘটেনি, তাই মামলা হয়নি। বাচ্ছাটিকে অভাবের তাড়নায় তার মা নিজেই দত্তক দিয়ে ছিলেন। কিন্তু বাচ্ছা দত্তক নেওয়ার নিয়ম-কানুন না মানায় বাচ্ছাটিকে উদ্ধার করে তার মার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন




এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
Design & Developed by Freelancer Zone