লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থানায় হামলা চালিয়ে সাজাপ্রাপ্ত ২জন আসামীকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় ১নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতাসহ ৪জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (৪ জুলাই) রাত ২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত পুলিশের যৌথ অভিযানে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) রাতে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থানায় পুলিশ বাদী হয়ে ২৭জনের নাম উল্লেখ করে এবং শতাধিক অজ্ঞাতনামাকে আসামী করে মামলা করেন। মামলায় থানায় হামলা, পুলিশের উপর হামলা, ভাংচুর, লুটপাট এবং সাজাপ্রাপ্ত আসামী ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। এজাহারে নামীয় আসামীদের অধিকাংশই বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত বলে পুলিশ জানিয়েছে।
গ্রেফতার ৪জন হলেন- রহমতপুর মেসিরপাড়া এলাকার আজিজুল ইসলামের ছেলে ও ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহিদুল ইসলাম, সোহাগপুরের সিরাজুল ইসলামের ছেলে আব্দুর রশিদ (৪৯), বাউড়া গ্রামের আব্দুল জব্বারের ছেলে হাবিবুর রহমান (৪২) ও একই গ্রামের মৃত মাহাতাব হোসেনের ছেলে আবুল কালাম (৫২)। তারা মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামী ছিলেন।
থানা থেকে ছিনিয়ে নেওয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামী ২জন হলেন- পাটগ্রামের মমিনপুর এলাকার লিয়াকত আলীর ছেলে বেলাল হোসেন এবং মির্জার কোর্ট এলাকার সামসুল হকের ছেলে সোহেল রানা চপল। তারা ২জনই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও দলে কোনো পদ নেই বলে পুলিশ জানিয়েছে।
বুধবার (২ জুলাই) রাতে লালমনিরহাট-বুড়িমারী জাতীয় মহাসড়কে পাটগ্রাম শহরের পাশে সরোওর বাজার এলাকায় পাথর ও বালুবাহী ট্রাকে চাঁদাবাজির সময় তাদের আটক করা হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত থেকে তাদের প্রত্যেককে ১ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ওই রাতেই থানায় আনা হলে কিছু সময় পর বিএনপি ও তাদের সমর্থকদের একটি দল থানায় হামলা চালিয়ে তাদের ছিনিয়ে নেয়।
এ সময় থানার ওসিসহ অন্তত ৮ পুলিশ সদস্যকে মারধর করে আহত করা হয়। গুরুতর আহত ২জন পুলিশ সদস্য বর্তমানে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় বিএনপির প্রায় ১২ জন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে।
ঘটনার পর শুক্রবার (৪ জুলাই) দুপুরে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলা বিএনপি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের নেতারা ঘটনার সঙ্গে বিএনপির সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্য্য নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার হাসান রাজীব প্রধান।
তিনি বলেন, ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে স্থানীয় পাথর কোয়ারি ইজারাদারদের সঙ্গে পুলিশের বিরোধ থেকে। বিএনপিকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জড়ানো হচ্ছে। আমাদের কিছু নেতাকর্মী থানায় গিয়েছিলেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা করতে।
তিনি আরও বলেন, দলের নাম ভাঙিয়ে কেউ ব্যক্তিগত অপকর্ম করলে তার দায় বিএনপি নেবে না। অতীতেও নেয়নি, ভবিষ্যতেও নেবে না। ইতোমধ্যে জেলা বিএনপি তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। দলের কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাটগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ মিজানুর রহমান বলেন, থানা থেকে ছিনিয়ে নেওয়া আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে অনেককে শনাক্ত করা হয়েছে। গ্রেফতার ৪ আসামীর কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।