শিরোনাম :
সাপ্তাহিক আলোর মনি পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। # সারাবিশ্বের সর্বশেষ সংবাদ পড়তে আমাদের সঙ্গেই থাকুন। -ধন্যবাদ।
শিরোনাম :
লালমনিরহাটে তিস্তা নদী এখন আবাদি জমিতে পরিণত লালমনিরহাট মুক্ত দিবস উপলক্ষ্যে বর্ণাঢ্য র‍্যালি, আলোচনা সভা ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠিত লালমনিরহাটে ৬২ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে (ভারপ্রাপ্ত বা চলতি দ্বায়িত্ব)র প্রধান শিক্ষক দিয়ে চলছে প্রাথমিক শিক্ষা! ৬ ডিসেম্বর লালমনিরহাট মুক্ত দিবস বর্ষিয়ান সাংবাদিক মোফাখখারুল ইসলাম মজনু ছিলেন লালমনিরহাটের সাংবাদিকতার উজ্জ্বল নক্ষত্র জুজুর ভয় লালমনিরহাটে ইরি-বোরো ধানের আদর্শ বীজতলা তৈরীতে ব্যস্ত কৃষক! লালমনিরহাটে শীতকালীন শাক সবজি চাষে ব্যস্ত কৃষকেরা লালমনিরহাটে ট্রাফিক সচেতনতামূলক প্রচারণা অনুষ্ঠিত লালমনিরহাটে তিন সাংবাদিককে হেনস্তা ও অশালীন আচরণ করার প্রতিবাদে মানববন্ধন-বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত
ছিটমহল বিনিময়ে ৮বছর; চালু হয়েছে নানা উন্নয়ন মূখী কাজ

ছিটমহল বিনিময়ে ৮বছর; চালু হয়েছে নানা উন্নয়ন মূখী কাজ

Exif_JPEG_420

লালমনিরহাটের ৫৯টিসহ দেশের ১শত ১১টি ছিটমহল বিনিময়ের ৮বছর পূর্তি সোমবার (৩১ জুলাই)। ২০১৫ সালের এই দিনের শুরুতে রাত ১২টা ১মিনিটে মোমবাতি জ্বালিয়ে আর সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যে দিয়ে ছিটমহল বিনিময় সম্পাদনের মাধ্যমে মুক্তি পায় ভারত-বাংলাদেশ উভয় দেশের ১শত ৬২টি ছিটমহলের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে উভয় দেশের নাগরিকগণ। বিনিময়ের ৮বছর পূর্তিতে বিলুপ্ত ছিটমহলবাসী নানা আয়োজনে দিবসটি পালন করছে। এদিকে দীর্ঘ ৪৪বছর ধরে পিছিয়ে থাকা বিলুপ্ত ছিটমহলগুলোতে চালু হয়েছে নানা উন্নয়ন মূখী কাজ।

 

১৯৭৪ সালের ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি ও ২০১১ সালের প্রটোকল স্বাক্ষর অনুযায়ী ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্য রাতে আর ১ আগস্ট সূর্যোদয়ের সাথে সাথে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন আর জাতীয় সংগীত গেয়ে বিনিময় হয় ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে থাকা ১শত ৬২টি ছিটমহল। এসব ভূ-খন্ডে বসবাসরত অধিবাসীরা হয়ে যায় স্বাধীন দেশের নাগরিক। ৬৮ বছরের বন্দী জীবনের অবসান হয়। সেই সাথে ইতিহাসের অংশ হয় ছিটমহল নামটি।

 

এদিকে ছিটমহল বিনিময়ের পরপরই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ১শত ১১টি ছিটমহলে শুরু হয় সরকারি ও বেসরকারি ভাবে নানা উন্নয়ন মূলক কাজ।

 

লালমনিরহাটের ৫৯টি বিলুপ্ত ছিটমহলে বসবাসরত রয়েছে ১০হাজারের অধিক নাগরিক।

 

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এসব বিলুপ্ত ছিটমহলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ২২টি প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্র স্থাপন, স্বাস্থ্য বিভাগের ৪টি ক্লিনিক স্থাপন, ৩৫টি ছিটমহলে বিদ্যুৎ সংযোগ, ৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন, ১শত ৭৮জন পুরুষ ও ৫৭জন মহিলাকে মৎস্য চাষ প্রশিক্ষণ, যুব উন্নয়নের উদ্যোগে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ৪৭জন পুরুষ ও ১শত ৩জন মহিলাকে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদান ও ঋণ বিতরণ। স্থানীয় সরকার বিভাগ (এলজিইডি)র অধীনে ৩৪কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ, জনস্বাস্থ্য বিভাগের অধীনে ৯৮টি অগভীর নলকূপ স্থাপন ও ৯০টি স্বাস্থ্য সম্মত ল্যাট্টিন নির্মাণ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ১১নং বাঁশকাটা ছিটমহল রক্ষার্থে ধরলা নদীর ১হাজার মিটার তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। নির্বাচন অফিসের উদ্যোগে জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরি ও প্রদান করা হয়েছে। তারা ইউনিয়ন, উপজেলা ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগের মধ্য দিয়ে এ দেশের নাগরিক হিসেবে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে অংশগ্রহণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজ চলমান রয়েছে।

 

তাছাড়াও রোটারী ক্লাব অব লালমনিরহাটসহ বিভিন্ন সংস্থা পিছিয়ে পড়া বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীর উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।

 

বাংলাদেশের বিলুপ্ত ছিটমহলগুলোতে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হলেও হতাশা আছে ভারতের বিলুপ্ত ছিটমহলগুলোর বাসিন্দাদের মধ্যে লালমনিরহাট জেলার লালমনিরহাট সদর উপজেলায় ৮ (আট) বছরের মাথায় বিলুপ্ত ছিটমহলের চিত্র পাল্টে গেছে। এক সময়ের বঞ্চিত জনপদে লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। ঘরে ঘরে এসেছে বিদ্যুৎ। বিলুপ্ত ছিটবাসী পাচ্ছেন স্বাস্থ্যসেবা, বয়স্ক ও বিধবা ভাতা। জমির কাগজপত্র হয়েছে তাঁদের। ডিজিটাল তথ্যসেবা কেন্দ্রের সেবাও পৌঁছে গেছে তাঁদের দোরগোড়ায়। বিলুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দাদের মনে তাই সুখের আমেজ।

 

বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডে ১শত ১১টি ছিটমহলের ১২টি পড়েছে কুড়িগ্রামে, লালমনিরহাটে ৫৯টি, পঞ্চগড়ে ৩৬টি এবং নীলফামারীতে পড়েছে ৪টি ছিটমহল। বিলুপ্ত ছিটমহলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় কুড়িগ্রামের দাসিয়ারছড়া।

 

লালমনিরহাট জেলার লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের ভিতরকুঠি বাঁশপচাই গ্রামটি আর আগের মতো নেই। গ্রামে এসেছে বহুল প্রত্যাশিত বিদ্যুৎ, নির্মাণ হয়েছে সাতটি কালভার্ট, দুই কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় পাকা হয়েছে। গ্রামে উঠেছে ভিতরকুঠি সালেহা সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়, নির্মাণ হয়েছে একটি সুদৃশ্য শহীদ মিনার। গ্রামের বয়স্ক, বিধবা ভাতা পেয়েছেন অনেকেই।

 

কুলাঘাট ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় হতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভিতরকুঠি বাঁশপচাই গ্রামে রেশন কার্ড, বয়স্ক ভাতা কার্ড, বিধবা ভাতা কার্ড, প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড দিয়েছে।

 

লালমনিরহাট জেলা পরিষদ থেকে বিশুদ্ধ পানীয় জলের জন্য গোড়াপাকা নলকূপ, প্রশিক্ষিত দরিদ্র নারীদের কর্মসংস্থানের জন্য জেলা পরিষদ থেকে সেলাই মেশিন বিনা মূল্যে দিয়েছে।

 

লালমনিরহাট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড থেকে ভিতরকুঠি বাঁশপচাই গ্রামে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার স্থাপন করা হয়েছে। এ ট্রান্সফরমারের আওতায় গ্রামের পরিবারগুলোকে আবাসিক বিদ্যুতের সংযোগ দিয়েছে।

 

শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা ভিতরকুঠি বাঁশপচাই গ্রামে আমাদের পরিবার নিয়ে বসবাস করছি। এখান থেকেই লেখাপড়া করছি। আমাদের চাকুরী ক্ষেত্রে কোঠার সুযোগ দেয়া দরকার। তাহলে আমরা পিছিয়ে পড়া থেকে এগিয়ে যেতে পারবো। সরকারের এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

 

উল্লেখ্য যে, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি ও সরকারি চাকুরিতে সুযোগ সৃষ্টির দাবী জানিয়েছেন পিছিয়ে থাকা বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীরা।

 

এদিকে সোমবার (৩১ জুলাই) রাত ১২টা ১মিনিটে লালমনিরহাট জেলার লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের সালেহা সরকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ভিতরকুটি বাঁশপঁচাই আঞ্চলিক কমিটির আয়োজনে ছিটমহল বিনিময়ের ৮বছর পূর্তি উপলক্ষে আলোচনা সভা, কেককাটা, মোমবাতি প্রজ্জ্বলন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।

 

এতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ভিতরকুটি বাঁশপঁচাই আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি মোঃ হারুন অর রশীদ-এঁর সভাপতিত্বে উপস্থিত থাকবেন লালমনিরহাট জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দসহ অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ।

সংবাদটি শেয়ার করুন




এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
Design & Developed by Freelancer Zone