শিরোনাম :
সাপ্তাহিক আলোর মনি পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। # সারাবিশ্বের সর্বশেষ সংবাদ পড়তে আমাদের সঙ্গেই থাকুন। -ধন্যবাদ।
লালমনিরহাটে কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ খেলাধুলা!

লালমনিরহাটে কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ খেলাধুলা!

আলোর মনি ডটকম ডেস্ক রিপোর্ট: সভ্যতার ক্রমবিকাশ আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা। শৈশবে যেসব খেলাধুলা খেলেছিলেন আজকের বৃদ্ধরা সেসব খেলাধুলা না দেখতে পেয়ে তারাও এখন ভুলে গেছেন বহু খেলার নাম। এক সময় গ্রামের শিশু ও যুবকরা পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলায় অভ্যস্ত ছিল। তারা অবসরে গ্রামের খোলা মাঠে দল বেঁধে খেলতো এসব খেলা। আর খেলাধুলার মাধ্যমে শৈশবে দুরন্তপনায় জড়িয়ে থাকতো ছেলে-মেয়েরা। কিন্তু মাঠ-বিল-ঝিল হারিয়ে যাওয়া, আধুনিক সভ্যতার ছোঁয়া ও কালের বিবর্তনে মহাকালের ইতিহাস থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে এসব খেলাধুলা। গ্রামীণ খেলা আমাদের আদি ক্রীড়া সংস্কৃতি। এসব খেলাধুলা এক সময় আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতির ঐতিহ্য বহন করত। বর্তমানে গ্রামীণ খেলা বিলুপ্ত হতে হতে আজ তার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়াই কঠিন। খোদ অজপাড়াগাঁয়েও সবচেয়ে বেশি প্রচলিত কাবাডি, দাঁড়িয়াবান্ধা, গোল্লাছুট, বৌ ছি, কানামাছি প্রভৃতি গ্রামীণ খেলার প্রচলন নেই। গ্রাম বাংলার খেলাধুলার মধ্যে যেসব খেলা হারিয়ে গেছে তাদের মধ্যে হা-ডু-ডু, কাবাডি, দাঁড়িয়াবান্ধা, মন্দুরুজ, গাদন, খো-খো, মার্বেল/ ডাংগুলি, গোল্লাছুট, গোশত তোলা, চিক্কা, এ্যাঙ্গো এ্যাঙ্গো, কুতকুত/ কিত্কিত্, ল্যাংচা, কিং কিং খেলা, বোমবাস্টিং, হাড়িভাঙা, বুদ্ধিমন্তর, চাঁ খেলা, বুড়ি ছি, বৌ ছি, কাঠিছোঁয়া, দড়ি লাফানো, বরফ পানি, দড়ি টানাটানি, চেয়ার সেটিং, রুমাল চুরি, চোখ বুঝা বুঝি, কানামাছি, ওপেন্টি বাইস্কোপ, নৌকা বাইচ, ঘোড়াদৌড়, এলাটিং বেলাটিং, আগডুম বাগডুম, ইচিং বিচিং, ইকড়ি মিকড়ি/ ইকরি বিকরি, ঝুম ঝুম ঝুম, নোনতা বলরে, লাঠিখেলা, বলীখেলা, আইচ্চা ভাঙ্গা, এক্কাদোক্কা, কুৎ কুৎ, মইলা, রাম সাম যদু মদু, চোর ডাকাত, মার্বেল, সাতচাড়া, থিলো এম্প্রেস, ষোলগুন্ডা, ষাঁড়ের লড়াই, মোরগ লড়াই, চিলমোরগ, বুঝাবুঝি, বদন, লাপা লাপি, লগো লগো, ডালিম, দৌড়াদৌড়ি, চেংগু পেন্টি, ছোপাছুপি, নাগরদোলা, সাত খোলা, ঘুড়ি উড়ানো, লাটিন ঘুড়ানো, গাড়াগাড়ি, ঠগা খেলা, ব্যাঙ ঝাঁপ, গুটি খেলা, পাতা ছেড়া খেলা, চড়ুই ভাতি, চকচ্চাল খেলা, ডিগ্গেল খেলা, সাঁতার, ছৈল, ডুবাডুবি, উল্টা হাটা, কাঠি খোঁজা খেলা অন্যতম। ঐতিহ্যবাহী হারিয়ে যাওয়া এসব খেলাধুলা এখন আর তেমন কোথাও চোখে পড়ে না। নতুন প্রজন্মের কাছে এগুলো এখন শুধুই গল্প। আবার নাম শুনে অনেকেই হাসে। গ্রামের এসব খেলাগুলোর মধ্যে হা-ডু-ডু, দাঁড়িয়াবান্ধা, গোল্লাছুট, বৌচি, ডাংগুলি ছিল সবচেয়ে জনপ্রিয়। এসব খেলা চলাকালে শতশত মানুষের ঢল নামতো খেলা প্রাঙ্গণে। কিন্তু এখন গ্রামের খেলার মাঠ কমে যাওয়ায় এসব খেলা শুধুই স্মৃতি। এক সময় এ দেশের ছেলে-মেয়েরা গ্রামীণ খেলাকে প্রধান খেলা হিসেবে খেলতো। আমাদের আদি ক্রীড়া সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে অবশ্যই গ্রামীণ ক্রীড়া ফেডারেশন গঠন করা অতি জরুরি। যাতে করে আগামী প্রজন্ম আমাদের গ্রামীণ খেলাকে জানতে পারে। ভুলে না যায় আমাদের নিজস্ব ক্রীড়া ঐতিহ্য। আজকের জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেট ষোল শতকের দিকে বিলুপ্তির পথে চলে গিয়েছিল। তখন বিলেতের ধনাঢ্য ব্যক্তিরা এগিয়ে আসেন ক্রিকেটকে বাঁচাতে। তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত হয় মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি)। এ ক্লাবটিই ক্রিকেটকে অপমৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেছে। সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে যে কোনো অখ্যাত খেলাও জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে।

বিশেজ্ঞরা বলছেন, এমসিসির মতই গ্রামীণ খেলাকে বাঁচাতে এ দেশের ধন্যাঢ্য ব্যক্তিরাই ভূমিকা পালন করতে পারেন। তাছাড়া সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগেও ফিরে আনতে পারে হারানো এসব খেলার ঐতিহ্য।

এ বিষয়ে ক্রীড়া সংগঠক, কবি ও সাংবাদিক মাসুদ রানা রাশেদ বলেন, চর্চা ও তথাকথিত আধুনিকতার কারণে হারিয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী এসব খেলাধুলা। এজন্য প্রয়োজন সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগ। তবেই ফিরে পাওয়া যাবে গৌরব।  প্রচলিত আধুনিক খেলার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হচ্ছে- ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন, দাবা, লুডু প্রভৃতি।

সংবাদটি শেয়ার করুন




এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
Design & Developed by Freelancer Zone