আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি ইতোমধ্যে ২৩৭ আসনে দলীয়ভাবে মনোনীত প্রার্থীর যে তালিকা প্রকাশ করছে, সেখানে লালমনিরহাটের তিনটি সংসদীয় আসনের মধ্যে একটি লালমনিরহাট-২ (আদিতমারী-কালীগঞ্জ) আসনের বিপরীতে কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয় নি। লালমনিরহাট-১ (হাতীবান্ধা-পাটগ্রাম) আসনে এবং লালমনিরহাট-৩ সদর আসনে দলীয় মনোনীত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করায়, সেখানে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্রীক গণ সংযোগ শুরু হয়েছে। লালমনিরহাট-২ (আদিতমারী-কালীগঞ্জ) আসনে দলীয় মনোনীত প্রার্থী হিসেবে কারো নাম ঘোষণা না করায় এবং লালমনিরহাট জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা না করা পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কোনো রকম সভা সমাবেশ না করতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় দলের নেতা কর্মী সমর্থকদের মধ্যে হতাশা ও চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী হিসেবে লালমনিরহাট জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী ফিরোজ হায়দার লাভলু, জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) রাসেল আহমেদ, ইসলামী আন্দোলনের মনোনীত প্রার্থী মুফতি মাহফুজুর রহমান নির্বাচনী এলাকায় গণ সংযোগসহ প্রচার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে এ আসনে সাবেক এমপি প্রয়াত মজিবুর রহমানের ছেলে বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) শামীম কামাল (জনতার দল) নির্বাচন কেন্দ্রীক নানান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এ আসনে প্রার্থী হিসেবে গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য দীপক কুমার রায়ের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
লালমনিরহাট-২ (আদিতমারী-কালীগঞ্জ) আসনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশি হিসেবে লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি রোকন উদ্দিন বাবুল এবং লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহবায়ক জাহাঙ্গীর আলম গণ সংযোগ শুরু করেছিলেন। সম্পর্কে চাচাতো ভাই রোকন উদ্দিন বাবুল ও জাহাঙ্গীর আলম। শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে এ দুজনের পরিচিতি রয়েছে। এমতাবস্থায় তাদের নিজ নিজ নেতা কর্মী সমর্থকদের নিয়ে নির্বাচন কেন্দ্রীক গণ সংযোগ শুরু হলে সাধারণ ভোটারসহ দলীয় নেতা কর্মী সমর্থকদের মধ্যে প্রকাশ্য বিভক্তি দেখা যায়।
এমন অবস্থায় লালমনিরহাট জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক জয়নুল আবেদীন স্বপন, চলতি বছরের ৩০ অক্টোবর লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সাংগঠনিক প্যাডে রোকন উদ্দিন বাবুল ও জাহাঙ্গীর আলম কে পৃথকভাবে চিঠি দিয়ে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কোনো রকম সভা সমাবেশ না করতে নির্দেশিত হয়ে চিঠি দেন।
বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে এ আসনে লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালেহ উদ্দিন আহমেদ হেলাল ও জিয়া পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ডক্টর রোকনুজ্জামানের নামও শোনা যাচ্ছে।
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জের বিএনপির কয়েকজন নেতাকর্মী সূত্রে জানা যায়, লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি রোকন উদ্দিন বাবুল ২০১৮ সালে এই আসনে দলীয় মনোনীত প্রার্থী হিসেবে এমপি নির্বাচন করে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন। তিনি ৭৮হাজার ১৫৩ ভোট পান। রোকন উদ্দিন বাবুল এর আগে ২০০৯ সালে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে ৪২হাজার ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হন। ২০১৪ সালে আরও একবার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন, তিনি পান ৩৬ হাজার ভোট, তার চাচাতো ভাই জাহাঙ্গীর আলম পান ১৪ হাজার ভোট।
বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী রোকন উদ্দিন বাবুল বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আমাকে প্রধান আসামি করে পাঁচটিসহ মোট ১৮টি হয়রানি মূলক মামলা ছিলো আমার বিরুদ্ধে। যেহেতু আমি এমপি নির্বাচন ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করি এবং সম্ভাবনাময় প্রার্থী, সেজন্য আমার বিরুদ্ধে ১৮টি হয়রানি মূলক মামলা দায়ের করা হয়। ৫ আগস্টের পর মামলা গুলো থেকে রেহাই পেয়েছি।
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জের চন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে তিনবার বিজয়ী, কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহবায়ক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাতটি হয়রানি মূলক মামলা দায়ের হয়। এর মধ্যে তিনটি প্রত্যাহার হয়েছে।
তিনি বলেন, আমি রাজনীতি করতে গিয়ে আমার পরিবারকে ঠিক মতো সময় দিতে পারিনি, দলের নেতা কর্মী সমর্থকদের সময় দিয়েছি এবং দিচ্ছি, তারা আমাকে আরও ভালো অবস্থানে দেখতে চায়। দল করি তাই দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করি। জনসংযোগ শুরু করেছিলাম। দল থেকে মনোনয়ন নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সভা সমাবেশ না করতে চিঠি দেওয়া হয়েছে, সেটা মেনে চলছি।
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : অধ্যক্ষ মোঃ রবিউল ইসলাম মানিক
সম্পাদক : মোঃ মাসুদ রানা রাশেদ
প্রকাশক : মোঃ রমজান আলী
নির্বাহী সম্পাদক : মোঃ হেলাল হোসেন কবির
Copyright © 2025 আলোর মনি. All rights reserved.