শিরোনাম :
সাপ্তাহিক আলোর মনি পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। # সারাবিশ্বের সর্বশেষ সংবাদ পড়তে আমাদের সঙ্গেই থাকুন। -ধন্যবাদ।
ভালোবাসার বিরল দৃষ্টান্ত: স্ত্রীকে হাতী কিনে দিলেন স্বামী দুলাল চন্দ্র

ভালোবাসার বিরল দৃষ্টান্ত: স্ত্রীকে হাতী কিনে দিলেন স্বামী দুলাল চন্দ্র

আলোর মনি ডটকম ডেস্ক রিপোর্ট: লালমনিরহাট জেলার লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের দেউতিরহাট রতিধর এলাকায় দৈবে পরমেশ্বরের আদেশে স্ত্রীকে ১৭লক্ষ টাকা ব্যয়ে হাতী কিনে দিলেন স্বামী দুলাল চন্দ্র। তা দেখতে এলাকায় মানুষের ঢল নেমেছে। প্রায় ১০বছর স্ত্রী তুলশী রাণী দাসী দেব-দেবীর পূজা করে আসছে।

তারই এক পর্যায়ে প্রায় দুই সপ্তাহ আগে স্বয়ং পরমেশ্বর ভর করে তুলশী রাণী দাসীর উপর। সেই ভরে (স্বপ্নে) পরমেশ্বর বলে একটি হাতী কিনতে। সেই হাতী দিয়ে মানুষের চিকিৎসা করা, পূজা পার্বন করতে হবে। সেই দৈব বাণীর কথা তুলশী রাণী দাসী স্বামী দুলাল চন্দ্রকে বলে। বিপাকে পরে কৃষক দুলাল চন্দ্র। তখন দুলাল চন্দ্র ৭২শতক জমি বিক্রয় করে ও ২বিঘা জমি বন্দক রেখে বাড়ির গাছ বিক্রি করে ১৭লক্ষ টাকা জোগাড় করে সিলেট থেকে কিনে আনে একটি হাতী। দৈব প্রাপ্ত প্রিয়তমা বউয়ের ভুতের আচরে টেনশনে কৃষক দুলাল। সেই পরমেশ্বরকে (ভূত) তাড়াতে একের পর এক চেষ্টা। পরমেশ্বরও নাছর বান্দা। তার দাবি পুরণ না হলে ছাড়ছে না কৃষক দুলাল চন্দ্রের বউ তুলসী রাণীকে। তুলসী রাণীর উপর ভর করে তার একের পর এক আবদার। আবদার পুরণ করতে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে প্রায় দুলাল। পরমেশ্বরের শেষ দাবি কিনতে হবে হাতি। প্রীয়তমা বউকে রক্ষায় কৃষক দুলাল শেষ সম্বল ৭২শতক ২বিঘা জমি বিক্রি করে কিনে আনে হাতি। হাতী কিনে বউকে রক্ষায় উপহার এলাকা জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে আলোড়ন। কৃষক স্বামীর হাতী উপহার বউয়ের প্রতি বিরল ভালোবাসা দেখতে প্রতিদিন হাজার হাজার কৌতুহলী মানুষের ভিড়। ঘটনাটি ঘটেছে লালমনিরহাটের সদরের পঞ্চগ্রামের রতিধর দেউতি গ্রামে। কৃষকের কথা মতো রাণীকে ভালো করতে নিঃশ্ব প্রায় স্বামী দুলাল চন্দ্র।

 

লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের রতিধর গ্রামে গরিবের বাড়িতে হাতীর পা দেখে হাজারও মানুষের উপচে পড়া ভিড়। দুলাল চন্দ্রের বাড়িতে রয়েছে খড়ের ঘড়। আছে একটি টিনের ঘড়। ৪বিঘা জমিতে ধান চাষ করে চলে তার সংসার। ওই গ্রামের দুলাল চন্দ্র রায় এর সাথে তুলশী রাণীর বিয়ে হয় ২০বছর পূর্বে। দীর্ঘ ২০বছর ছিলো না তাদের সংসারে বিরোধ। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ছিলো অটুট ভালোবাসার বন্ধন। ১ছেলে ও ১মেয়ে পিতা-মাতাও হয়েছে তারা। দুলাল চন্দ্রের সাথে তুলসী রাণীর বিরল ভালোবাসা দেখে অবাক গ্রামবাসীরা। দুলাল চন্দ্র দরিদ্র কৃষক হলেও ছিলো বউয়ের প্রতি অঘাত ভালোবাসা। দুলাল চন্দ্রের পৈতিক সূত্রে প্রাপ্ত ৪বিঘা জমি ছিলো তা দিয়ে চলে তার সংসার। তাদের সংসারে ভর করলো ভুতের আচর প্রানপ্রিয় বউ তুলসীর উপর। ভুতের আচর হলে তুলসী রাণী হয়ে পড়ে অসুস্থ্য। তাকে সুস্থ্য করতে অনেক চেষ্ঠা করেও ব্যর্থ স্বামী দুলাল চন্দ্র রায়। ভালোবাসার স্ত্রীর অসুস্থতায় টেনশনে দুলাল। তুলসীর উপর ভুতের ভরের সময়; ভুত করে তার কাছে নানান দাবি করে। প্রথমে দাবি করে হাঁস জবাই করলে যাবে তুলসীকে ছেড়ে সেই ভুত। হাঁস জবাই করেও গেল না ভুত। পরবর্তীতে ভুতের দাবি একটি ঘোড়া কিনতে হবে তার স্বামী দুলাল চন্দ্রকে। দরিদ্র দিনমজুর দুলাল তার প্রিয়তমা তুলসীকে রক্ষায় ৪বিঘা জমির মধ্যে ১বিঘা জমি বিক্রি করে ১টি ঘোড়া কিনে আনে। ঘোড়া কিনেও শান্তি হয়নি। তুলসী দিনে দিনে আরও অসুস্থ্য হয়ে পড়লো। তাকে আবার ভর করে এবার দাবি করে হাতী কিনে আনতে হবে। হাতী কেনা কথা বলে বেকায়দায় দুলাল চন্দ্র। ভুতের কবল থেকে বউকে রক্ষা করতে হবে দুলালের এক প্রতিজ্ঞা। অবশেষে দুলাল তার স্ত্রীকে রক্ষায় বাড়ির বাকি ৩বিঘা আবাদি জমি বিক্রি ধার-দেনা করে। বাড়ির গাছ এমনকি বসতবাড়ি বন্দক রেখে বউকে রক্ষায় ১৬লাখ ৫০ হাজার টাকায় কিনে হাতী। গরীবের বাড়িতে হাতীর পা। সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলা থেকে হাতীটি ক্রয় করেন তিনি। নিয়ে আসেন ট্রাকে। গত শুক্রবার গরীবের বাড়িতে হাতির পা দেখে হাজারও দর্শকের ভিড়। কৃষক হয়ে দুলাল চন্দ্র প্রিয়তমা স্ত্রীর সুস্থ্যতায় হাতী উপহার বিষয়টি সর্বত্র চলছে আলোড়ন। স্ত্রী তুলসীর প্রতি বিরল ভালোবাসা কৃষক দুলাল চন্দ্র রায়ের। হাতী কিনতে কিছু দিন দেরী হওয়ায় দিনে দিনে অসুস্থ্য হয়ে পড়তো দুলালের স্ত্রী। দুলাল চন্দ্রের স্ত্রীর প্রতি বিরল ভালোবাসা ও হাতী কিনে আনা নিয়ে দুর দুরান্ত থেকে হাতী ও দুলাল চন্দ্র-তুলসী রাণীকে দেখতে ছুটে আসছেন অনেকে। সিলেটের মৌলিভীবাজার থেকে ট্রাকে হাতী পরিবহন ভাড়া ২০হাজার টাকা। তাও ছিলোনা তার হাতে। গাছ বিক্রি করে দেওয়া হয় ট্রাক ভাড়া। সাথে হাতী পোষ মানার জন্য সিলেট থেকে এসেছে শরিফুল নামের একজন মাউথ। হাতী চড়ানো শেখা বেতন ওই মাউথের প্রতিমাসে ১৫হাজার টাকা।

 

মাউথ শরিফুল জানান, হাতী প্রতিদিন ১০টি কলার গাছ, ৩কেজি ভুসি, গুড় ২কেজি, কলা ২পির তার খাবার লাগবে। প্রতিমাসে হাতীর খোরাক প্রায় ১০ থেকে ১২হাজার টাকা। হাতীটি প্রশিক্ষণের জন্য একজন মাউথ রাখা হয়েছে। তার বেতন ১৫হাজার টাকা। খাওয়ার জন্য মাউথের ৬হাজার টাকা। এ ছাড়াও হাতীর খাওয়া ব্যয়সহ প্রতি মাসে দুলাল চন্দ্রের ব্যয় প্রায় ৩৫হাজার টাকা। এ টাকা যোগান নিয়ে টেনশনে দুলাল।

 

দুলাল চন্দ্র জানান, ভগবান দিবে। সম্পত্তির চেয়ে আমার কাছে আমার স্ত্রীর আবদার বড়।

 

স্ত্রী তুলসী রাণী জানান, ভগবানের দয়ায় যে হাতী এসেছে এখন আমি কিছুটা সুস্থ্য।

 

স্বামী-স্ত্রীর বিরল ভালোবাসায় খুশি পঞ্চগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যন দেলোয়ার হোসেন। তিনি আরও জানান, দুলাল চন্দ্র হাতীর খরচ কিভাবে সংগ্রহ করবে তা নিয়ে রয়েছে তার দুচিন্তা। কিন্তু তার বউয়ের প্রতি যে এতো ভালোবাসা। বউকে সুস্থ্য করতে জমি বিক্রি করে হাতী কিনলো দুলাল। কৃষক দুলাল চন্দ্র ও স্ত্রী তুলসী রাণীর বিরল ভালোবাসায় খুশি এলাকাবাসী।

 

এলাকার লোকজন জানান, হাতী দেখে তো আমরা অবাক হয়েছি। গরিবের বাড়িতে হাতির পা দেখতে সবাই দলে দলে ছুটে আসছে। বউয়ের প্রতি স্বামীর বিরল ভালোবাসা দেখে খুশি এলাকার লোকজন।

 

লালমনিরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা উত্তম কুমার রায় জানায়, হাতী আনার বিষয়টি শুনেছি। তবে এটি বিরল ঘটনা।

সংবাদটি শেয়ার করুন




এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
Design & Developed by Freelancer Zone