ঐতিহ্যবাহী শ্যামাপুজা (বুড়ির মেলা)কে ঘিরে রোববার (১৯ অক্টোবর) বাংলাদেশের মোগলহাট-দূর্গাপুর ও ভারতের দড়িবাস জারি ধরলা সীমান্তের ধরলা নদী পাড়ে পরিণত হয় বাংলাদেশ ও ভারত দু’দেশের মানুষের মিলন মেলায়। উভয় দেশের হাজারও দর্শনার্থীর সমাগমে দিন ব্যাপী মুখরিত ছিল ধরলা নদী এলাকা।
জারিধরলার শ্যামা মন্দিরের পুজোয় শ্যামাপুজা (বুড়ির মেলা) উপলক্ষে সীমান্ত ছিল দুপুর থেকে উন্মুক্ত। এ সীমান্তে দু'দেশের মানুষ অবাদে মেলায় অংশ নিয়েছে।
লালমনিরহাট জেলার লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ও আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর সীমান্তে ধরলা নদীর পাড়ে ৯২৭ নম্বর সীমান্ত পিলারের কাছে দিনভর অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত মিলন মেলায় দেখা হয় উভয় দেশের নাগরিকদের।
প্রতি বছরের মতো এবারও ধরলা নদীপাড়ে সীমান্তের কোলঘেষে ভারতের কোচবিহার জেলার দিনহাটা থানার দড়িবাস এলাকায় শ্রীশ্রী মা বৃদ্ধেশ্বরী দেবীর পূজা উপলক্ষে এই সীমান্ত মেলা বসে। স্বাধীনতার আগে হতে পূজা ও মিলন মেলা এক সাথে চলছে এখানে।
মেলাটি ভারতীয় ভূ-খণ্ডে হলেও অনেক স্থানে কাঁটাতারের বেড়া পার হয়ে আসতে হয়। এ বছর এ মেলা উন্মুক্ত হয়ে গেছে।
দুই দেশের মানুষ এক সাথে পূজা দেন, একসাথে প্রসাদ খান, আর একদিনের জন্য হলেও ভুলে যান সীমান্ত রেখার বিভাজন।
দিনভর পূজা উপলক্ষ্যে মিলন মেলায় ২০-২৫ হাজারের বেশি ভক্ত ও দর্শথনার্থী সমবেতন হন। বিকাল ৪টা থেকে দর্শনার্থীরা বাড়িতে ফিরে যেতে শুরু করেন। কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি মেলায়। মেলায় বিপুলসংখ্যক বিএসএফকে টহল দিতে দেখা গেছে।
মেলা ঘিরে দু'দেশেরই ভক্তরা আসেন নানা জায়গা থেকে। মন্দির প্রাঙ্গণে বসে খাবার, খেলনা, শাড়ি, গয়নার দোকান। সূর্যোদয়ের সঙ্গে শুরু হয় পূজা, সূর্যাস্তের আগে শেষ হয় সব আয়োজন। নিরাপত্তায় সতর্ক থাকে উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী।
মেলায় শুধু লালমনিরহাট নয়, রংপুর, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও কুড়িগ্রামসহ দেশের নানা জেলা হতে মানুষ এসেছে। শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ এসে তা কিন্তু নয়। এসেছে মুসলিম, খৃষ্টানসহ নানা সম্প্রদায়ের মানুষ। কারণ দুই দুই বার দেশ ভাগ হয়েছে একবার ১৯৪৭ সালে আরেকবার ১৯৭১ সালে। তখন সকল সম্প্রদায়ের পরিবারগুলো ভাগ হয়ে গিয়ে ছিল। সেই স্বজনরা প্রযুক্তির কল্যাণে মেলায় একত্রিত হতে পারে। এখানে এসে আত্মীয়দের বুকে জড়িয়ে ধরেছে। সীমান্তের এই মেলায় কাঁদে সবাই, কিন্তু সেই কান্নায় থাকে আনন্দের সুর। এটা শুধু আবেগ নয়, এটা সীমান্ত পেরোনো প্রেমের এক অফুরন্ত চিত্র।
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : অধ্যক্ষ মোঃ রবিউল ইসলাম মানিক
সম্পাদক : মোঃ মাসুদ রানা রাশেদ
প্রকাশক : মোঃ রমজান আলী
নির্বাহী সম্পাদক : মোঃ হেলাল হোসেন কবির
Copyright © 2025 আলোর মনি. All rights reserved.