লালমনিরহাটের পাটগ্রামে চাঁদাবাজির অভিযোগে দুই বিএনপির কর্মীকে কারাদণ্ড দেয়ার জের ধরে থানা ঘেরাও করে হামলা ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে ৮ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ২০জন আহত হয়েছে। আহত ২ পুলিশ সদস্যকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও অপর ৬জনকে পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া বিএনপির অন্তত ১২জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবী করেছে স্থানীয় বিএনপি।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, লালমনিরহাটের পাটগ্রামে বুড়িমারী-রংপুর জাতীয় মহাসড়কে চাঁদাবাজির অভিযোগে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে সোহেল রানা ও বেলাল হোসেন নামের ২জন বিএনপির কর্মীকে আটক করে এক মাসের সাজা দেয় পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার উত্তম কুমার দাশ। তবে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের দাবী সম্প্রতি ইজারা পাওয়া পাথর কোয়াড়ির বিভিন্ন যানবাহন থেকে চাঁদা নিচ্ছিলেন তারা। যদিও ইউএনও উত্তম কুমার দাশের দাবী, ইজারার শর্তে উল্লেখ আছে পাথর কোয়াড়ির সুনির্দিষ্ট স্থান হতেই পাথর অপসারণ ও উত্তোলন করতে হবে। কিন্তু কোনো ধরনের মহাসড়কে টোলঘর বসিয়ে চাঁদা তুলতে পারবেন না। কিন্তু তারা সেটা করছিলো বিধায় লক্ষাধিক টাকার রিসিভ মানিসহ আটক করে তাদের সাজা দেয়া হয়েছে।
এ ঘটনার পর ক্ষুব্ধ হয়ে পাটগ্রাম থানায় জড়ো হয় বিএনপির বেশকিছু নেতাকর্মী। এ সময় পাটগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মিজানুর রহমানের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন তারা। এক পর্যায়ে পুলিশের সাথে ধাক্কাধাক্কি এবং পরে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। খবর ছড়িয়ে পড়লে বিএনপির কয়েক শত নেতাকর্মী জড়ো হয়ে থানা ঘেরাও করে ভাংচুর করে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এতে উভয় পক্ষের ২০জন আহত হয়।
বিএনপির একটি সূত্র বলছে, পাটগ্রাম থানায় এই দু'জনকে নিয়ে যাওয়ার খবরে বিএনপির কর্মী ও সমর্থকেরা ক্ষোভ প্রকাশের এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে বাকবিতন্ডার সৃষ্টি হলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এবং ঘটনাস্থলে তোপের মুখে ওই ২জন মুক্ত হয়। গ্রেফতার ও সাজার ঘটনায় পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে পর্যায়ক্রমে বিএনপি নেতা বাদশা জাহাঙ্গীর মোস্তাজির চপলসহ কয়েকজন নেতাকর্মীর সঙ্গে পুলিশের কথা কাটাকাটি হয়। মুলত গ্রেফতারের ঘটনায় অস্থিরতা তৈরি হলে এক পর্যায়ে সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটে। এ সময় বিএনপি নেতা চপলসহ বিএনপির প্রায় ১২জনের মতো আহত বলে জানান তারা।
তবে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য ব্যারিস্টার হাসান রাজিব প্রধান বলেন, ইজারাদারদের সাথে পুলিশের বিরোধকে বিএনপির দায় চাপানো হচ্ছে। পুলিশের অতিরঞ্জিত বাড়াবাড়িতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়েছে। আজ সংবাদ সম্মেলন করে আমাদের বক্তব্য তুলে ধরা হবে।
পাটগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, অবৈধ চাঁদা তোলাকে কেন্দ্র করে কথা-কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি চপলকে আটকের জেরে পুলিশের ওপর হামলা চালায় তার কর্মীসমর্থকরা। থানার আসবাবপত্র, জানালার গ্লাস, কম্পিউটার ভাংচুর করা হয়েছে এবং আমাদের ৮জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, থানায় হঠাৎ আক্রমনের ঘটনা ঘটলে পুলিশ টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে তারা বেশকিছু সরঞ্জামাদি নষ্ট করে দেয়। এ সময় ৮জন পুলিশ আহত হয়েছে বলে জানান তিনি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিজিবি মোতায়েন করা হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশের উদ্বোধন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার মোঃ তরিকুল ইসলাম বলেন, আমি ঘটনাস্থলে আছি। ডিআইজি স্যার ও জেলা প্রশাসক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছেন। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ পুলিশ রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি মোঃ আমিনুল ইসলাম, লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার, লালমনিরহাট পুলিশ সুপার মোঃ তরিকুল ইসলাম লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থানা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন।
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : অধ্যক্ষ মোঃ রবিউল ইসলাম মানিক
সম্পাদক : মোঃ মাসুদ রানা রাশেদ
প্রকাশক : মোঃ রমজান আলী
নির্বাহী সম্পাদক : মোঃ হেলাল হোসেন কবির
Copyright © 2025 আলোর মনি. All rights reserved.