লালমনিরহাটে দশম শ্রেণির প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষা-২০২৫ইং বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় (সৃজনশীল ও সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন) বিষয়ের প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে এলাকাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। তদন্ত করতে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) বিকেলে ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করেন আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিধান কান্তি হালদার।
আদিতমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জাকির হোসেনকে কমিটির প্রধান করা হয়।
এর আগে সকালে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষার বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বিষয়ের সৃজনশীল প্রশ্নে এ ভাষণ ব্যবহার হলে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
জানা গেছে, আদিতমারী উপজেলার বিদ্যালয়গুলোতে আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মঙ্গলবার (১ জুলাই) ছিল বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বিষয়ের পরীক্ষা। সেখানে সৃজনশীল প্রশ্নের উদ্দীপকে ছিল বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ। এটি শিক্ষার্থীদের হাতে বিতরণ করে পরীক্ষা নেয়া হয়। পরীক্ষা শেষে মহিষখোচা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের এক সেট প্রশ্নপত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এ ঘটনা তদন্তে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিধান কান্তি হালদার।
প্রশ্নপত্রে লেখা হয়, ইউনেসকো ২০১৭ সালে একটি ভাষণকে বিশ্ব প্রামাণ্য দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। যার অংশবিশেষ এমন "রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয়বাংলা।"
প্রশ্নপত্র প্রসঙ্গে মহিষখোচা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) আবুল হোসেন বলেন, আমরা উপজেলা শিক্ষক সমিতির কাছ থেকে প্রশ্নপত্র ক্রয় করে পরীক্ষা নিয়েছি। সমিতি নিজেরা প্রণয়ন না করে বগুড়ার একটি প্রেস থেকে ক্রয় করেছে। এমন সমস্যা শুধু আমার বিদ্যালয়ে নয়, উপজেলার ১০টি বিদ্যালয়ে এমন পরিস্থিতি হয়েছে।
আদিতমারী উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি কুমড়িরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলাম কাজল এবং সম্পাদক চড়িতাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আ স ম রওশন নবী মোহন। আওয়ামী লীগ পরিবারের লোকজন সমিতির নেতৃত্বে থাকায় প্রশ্নপত্রে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ স্থান পেয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয় লোকদের। সারা দেশের অধিকাংশ স্থান থেকে আওয়ামী দোসরদের বিভিন্ন দায়িত্ব থেকে অপসারণ করা হলেও উপজেলা শিক্ষক সমিতিতে রয়েছে বহাল তবিয়তে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রধান শিক্ষক বলেন, কেনা প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়ার নিয়ম নেই। আমরা বেশ কিছু বিদ্যালয় নিজস্ব প্রশ্নে পরীক্ষা নিচ্ছি। আওয়ামী দোসররা সমিতির নেতৃত্ব দেওয়ায় তারা ইচ্ছাকৃতভাবে এমন প্রশ্নপত্র সরবরাহ করেছে। তদন্ত করে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানান তিনি।
জাতীয় নাগরিক পার্টির সমন্বয়ক (উত্তরাঞ্চল) রাসেল আহমেদ বলেন, আওয়ামী দোসররা আজও ভুল ইতিহাস শিক্ষার্থীদের জানাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তাদের প্রতিহত করে আগামী প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে। যারা বিকৃত ইতিহাস তুলে ধরে, খলনায়কের বক্তব্যে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করে পরীক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
আদিতমারী উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি কামরুল ইসলাম কাজল বলেন, সমিতি কোনো প্রশ্ন প্রণয়ন করে না এবং করেওনি। যারা বলেছে, তারা ভুল বলেছে।
আদিতমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জাকির হোসেন বলেন, তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে। আমরা তদন্ত কমিটি তদন্ত শুরু করেছি। তারা সমিতির ক্রয় করা প্রশ্নে পরীক্ষা নিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে। তবে নিজস্ব প্রশ্ন ছাড়া পরীক্ষা নেয়ার কোনো নিয়ম নেই বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিধান কান্তি হালদার বলেন, পরীক্ষা শেষে বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। তাৎক্ষণিক শিক্ষক সমিতির নেতা ও সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ডেকে নিয়ে আগামী দিনের পরীক্ষার জন্য সতর্ক করা হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্ত করতে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। শিক্ষক সমিতি প্রশ্নটি বগুড়ার একটি প্রেস থেকে ক্রয় করে সরবরাহ করেছে বলে প্রাথমিকভাবে শোনা যাচ্ছে।
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : অধ্যক্ষ মোঃ রবিউল ইসলাম মানিক
সম্পাদক : মোঃ মাসুদ রানা রাশেদ
প্রকাশক : মোঃ রমজান আলী
নির্বাহী সম্পাদক : মোঃ হেলাল হোসেন কবির
Copyright © 2025 আলোর মনি. All rights reserved.