শিরোনাম :
সাপ্তাহিক আলোর মনি পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। # সারাবিশ্বের সর্বশেষ সংবাদ পড়তে আমাদের সঙ্গেই থাকুন। -ধন্যবাদ।
দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি-সড়ক অবরোধ, কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতিসহ ৪জনের বিরুদ্ধে ‘হত্যা চেষ্টা’র মামলা করলেন মন্ত্রীর ভাই উপজেলা চেয়ারম্যান

দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি-সড়ক অবরোধ, কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতিসহ ৪জনের বিরুদ্ধে ‘হত্যা চেষ্টা’র মামলা করলেন মন্ত্রীর ভাই উপজেলা চেয়ারম্যান

আলোর মনি ডটকম ডেস্ক রিপোর্ট: উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতিসহ ৪জনের বিরুদ্ধে কালীগঞ্জ থানায় ‘হত্যা চেষ্টা’র অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুজ্জামান আহমেদ। তিনি লালমনিরহাট-০২ আসনের (কালীগঞ্জ-আদিতমারী) সাংসদ ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের সহোদর ভাই।

আজ বুধবার ১৯ আগস্ট বিকালে কালীগঞ্জ থানার ইন্সপেক্টর ফরহাদ হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ সূত্র জানায়, গতকাল মঙ্গলবার (১৮ আগষ্ট) রাত অনুমান সাড়ে ৮টার দিকে তুষভান্ডার ইউনিয়নের কাশিরাম এলাকায় হারুন-অর-রশীদের গোডাউনের সামনে মারামারির ঘটনায় ওইদিন রাত ১২টা ৩৫মিনিটে (১৯ আগষ্ট) কালীগঞ্জ থানায় ৩১৭৯(৩)/১ নম্বর মামলাটি রেকর্ড করা হয়। আসামীরা হলেন- তুষভান্ডার ইউনিয়নের কাশিরাম এলাকার আহের আলীর ছেলে হারুন-অর-রশীদ (৪২), একই এলাকার সেলিম হায়দারের ছেলে তৌকির আহমেদ হৃদয় (২৫), আব্দুল হামিদ টোকসার ছেলে জাকিরুল ইসলাম (৩৫) ও আবু তালেবের ছেলে রাহেবুল ইসলাম (৪০)। হৃদয় উপজেলা ছাত্রলীগের উপ-স্কুল বিষয়ক সম্পাদক এবং অপর দুইজন হারুনের ব্যবসায়িক পার্টনার।

অপরদিকে একই এলাকার আজাহার আলীর ছেলে জাকির হোসেন (৩৫) ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হয়ে উপজেলা হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় ভর্তি রয়েছে। অন্যরা মামলা-হামলার ভয়ে স্থানীয়ভাবে গোপনে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।

মামলার এজাহার, প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতকর্মীদের সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার (১৫ আগষ্ট) দিনগত সন্ধ্যায় কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী বাজার এলাকায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসের উপর এক আলোচনা সভার আয়োজন করে বিডিএম নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন শিক্ষার্থী ওমর ফারুক। কিন্তু ওই অনুষ্ঠানের বিষয়ে জানতে তাকে ফোন করেন উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি প্রভাষক হারুন অর রশীদ। তাকে মোবাইলে গালাগাল করে দেখা করতে বলেন। ওমর ফারুক শোকসভার অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর সহোদর ভাই মাহবুবুজ্জামান আহমেদকে বিষয়টি অবগত করে। পরে ছাত্রলীগ সভাপতিকে মোবাইলে কল করে সাক্ষাৎ করতে বলেন উপজেলা চেয়ারম্যান। মোবাইল কলেই উপজেলা চেয়ারম্যানের সাথে হারুনের বচসা হয়। এরপর উপজেলা চেয়ারম্যানের ছেলে জেলা ছাত্রকল্যাণ পরিষদের সিনিয়র সভাপতি সাকিব মাহবুব মীমকে মোবাইলে কল করে হারুন তার চেম্বারে (তেতুল তলা) ডাকেন। জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজিদ মাহবুব মেলভিন, কালীগঞ্জ উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাজেদা বেগমসহ আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরসহ উপজেলা চেয়ারম্যানের ছেলে জেলা ছাত্রকল্যাণ পরিষদের সিনিয়র সহসভাপতি সাকিব মাহবুব মীম (১৮ আগষ্ট) মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ছাত্রলীগ সভাপতি হারুন-অর-রশীদের চেম্বারে যান। মীম ও হারুনের কথোপকোথনের এক পর্যায়ে হারুনের লোকজন ধারালো অস্ত্রো-লাঠিসোঠা নিয়ে হামলা চালায়। এতে জাকির হোসেনসহ ৫/৬জন আহত হন।

 

সাকিব মাহবুব মিম বলেন, ‘আমরা কথা বলছিলাম ছাত্রলীগ সভাপতি হারুন-অর-রশীদের সাথে। এ সময় তার লোকজন চারদিক থেকে আমাদেরকে ঘেরাও করে মারধর শুরু করলে লোকজন দ্বিগবিদিক ছোটাছুটি শুরু করে। এ সময় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হন জাকির হোসেন। অন্যরা ছিলা-ফুলা যখম হয়। এ ঘটনায় আব্বু বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে।’

 

উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হারুন-অর-রশীদ মোবাইলে গালাগালের কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘উপজেলা চেয়ারম্যানই আমাকে গালাগাল করেছেন। এরপর তাঁর মিসেস, দুই ছেলেসহ তাদের লোকজনই এসে আমার অফিস, মোটরসাইকেল নষ্ট করে উল্টো আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার বিষয়ে আমি আমার নেতা স্থানীয় সাংসদ ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মহোদয়কে সবকিছু অবহিত করেছি। তিনি যা করবেন, আমি সেটাই মেনে নেব। এখানে আমার ব্যক্তিগত কোনো কিছু করার নেই।’

 

কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুজ্জামান আহমেদ বলেন, ‘বিডিএম সংগঠনের শিক্ষার্থীদের মোবাইলে কল করে গালিগালাজ করে। বিষয়টি জানতে আমি ছাত্রলীগ সভাপতি হারুনকে কল করি। এ সময় হারুনকে ধমক দেই। কিন্তু সে পাল্টা মোবাইলে আমার টুটি চেপে ধরতে চায় এবং শুয়ারের বাচ্চা বলে বচসায় জড়িয়ে পড়ে। এরপর বিষয়টি আমার ছেলে ও স্ত্রী শোনার পরই লোকজনসহ হারুনের গদিতে গেলে তার লোকজন লাঠিসোঠা নিয়ে আমার স্ত্রী ও ছেলের ওপর হামলার চেষ্টা করে। এ সময় জাকির হোসেন প্রতিহত করার চেষ্টা করলে তাকে কুপিয়ে জখম করা হয়। আমি প্রতিকার চেয়ে ওই ঘটনায় কালীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছি।’

 

কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘আমি ছুটি শেষে আজ বুধবার (১৯ আগষ্ট) যোগদান করেছি। মঙ্গলবার (১৮ আগষ্ট) রাতের ঘটনায় উপজেলা চেয়ারম্যান মাহবুবুজ্জামান আহমেদ বাদীয় হয়ে পেনাল কোড ১৯৬০ এর ৩২৬/৩০৭/৫০৬/১১৪ ধারায় হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিট করে গুরত্বর জখম, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং হুকুম দানের অপরাধে হারুন-অর-রশিদসহ আরো ৩জনের নাম এজাহারে উল্লেখ করে একটি মামলা রুজু করেন। আসামী ধরার ব্যাপারে পুলিশী তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।’

সংবাদটি শেয়ার করুন




এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
Design & Developed by Freelancer Zone