শিরোনাম :
সাপ্তাহিক আলোর মনি পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। # সারাবিশ্বের সর্বশেষ সংবাদ পড়তে আমাদের সঙ্গেই থাকুন। -ধন্যবাদ।
শিরোনাম :
লালমনিরহাটে উপজেলা চেয়ারম্যান ৭, ভাইস চেয়ারম্যান ১০, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ৬জন বৈধভাবে মনোনীত প্রার্থী; ১জন চেয়ারম্যানের মনোনয়নপত্র বাতিল! প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী ২০২৪ শুভ উদ্বোধন এবং আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত মানবিক সহায়তা (ঢেউটিন ও টাকা) বিতরণ অনুষ্ঠিত এমদাদুল সিন্ডিকেটের এক সদস্য গ্রেফতার! সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে সাবেক ইউপি সদস্য গুলিবিদ্ধ লালমনিরহাটের ২টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৮জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১০জন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিল দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ লালমনিরহাটের শখের বাজার সড়কের পথচারীরা, কর্তৃপক্ষ নির্বিকার লালমনিরহাটে বিলুপ্তির পথে ঘুঘু পাখি! একুশ বছর সেই বাসী চাঁদ
লালমনিরহাটে সরকারি ওষুধের যতো কান্ড!

লালমনিরহাটে সরকারি ওষুধের যতো কান্ড!

আলোর মনি ডটকম ডেস্ক রিপোর্ট: লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের স্টোরের ৩৪পদের ওষুধের হিসাবে গরমিল ধরা পড়েছে। গরমিল হওয়া ওষুধের মূল্য প্রায় ৯৫লাখ টাকা। এর মধ্যে এসকেএফ কোম্পানীর প্রস্তুত ৩২০মিলিগ্রামের অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেট জেমি ফ্লোক্সাসিন ট্যাবলেট নেই ৫০হাজার পিচ। প্রতিটি ৬৪টাকা মূল্যের হিসাবে শুধু এই ওষুধের মূল্য ৩২লাখ টাকা।

 

সরকারি ওষুধের এই গরমিলের বিষয়টি ৩সদস্য বিশিষ্ট স্পেশাল সার্ভে কমিটি ২০১৯ সালের ২২ মে’র লিখিত প্রতিবেদনে উঠে এসেছিল। এই ঘটনায় হাসপাতালের তৎকালীন স্টোরকিপার মোঃ সাহেদুল হককে ২০১৯ সালের ২৩ মে নীলফামারীর ডিমলা ৫০শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে তাৎক্ষণিক প্রত্যাহার করা হয়েছিল। সাহেদুল হক পরবর্তীতে স্টোরের ওষুধের স্থিতি বুঝিয়ে দিয়ে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছিলেন।

 

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক গোলাম মোহাম্মদ দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের ওষুধ সরবরাহের দরপত্র আহ্বান প্রক্রিয়া শুরু করেন। এ সময় তিনি স্টোরের ওষুধের মজুত ও সরবরাহ সংক্রান্ত রেজিস্ট্রারসমূহ পরীক্ষা করেন। এতে স্টোরের ওষুধের স্টক রেজিস্ট্রার, ইস্যু ভাউচার, সরবরাহ বইসহ অন্য কাগজপত্রে ওভার রাইটিং ও কাটাকাটি দেখতে পান। এ ধরনের অসংগতির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট (মেডিসিন) মোঃ আবদুল বাসেতকে প্রধান করে ৩সদস্যের স্পেশাল সার্ভে কমিটি করে দিয়েছিলেন। কমিটির অন্য ২সদস্য হলেন লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) আমিনুর রহমান ও সদস্য সিনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারি) আবদুল হামিদ। এই কমিটির সদস্যরা ২০১৯ সালের ২২ মে হাসপাতালের স্টোরের ৩৪ধরনের ওষুধের হিসাবের গরমিল রয়েছে মর্মে লিখিত প্রতিবেদন দাখিল করেছিলেন।

এরপর লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক গোলাম মোহাম্মদ স্টোরের ওষুধের হিসাবের গরমিলের বিষয়টি রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়ে ২০১৯ সালের ২২ মে অবহিত করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনিক কারণে রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক অমূল্য চন্দ্র সাহা স্টোরকিপার মোঃ সাহেদুল হককে নীলফামারীর ডিমলা ৫০শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে তাৎক্ষণিক প্রত্যাহারের আদেশ দিয়ে এক পত্র জারি করেছিলেন।

 

লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট (মেডিসিন) মোঃ আবদুল বাসেত সেই সময় গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, স্টোরের ওষুধ সার্ভের সময় মজুত ও সরবরাহ পর্যালোচনায় ৩৪ধরনের ওষুধের গরমিল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে জেমি ফ্লোক্সাসিন, সেফুরাক্সিম, মন্টিলুকাস্ট ট্যাবলেটসহ ৩৪ধরনের ওষুধের স্টক ও সরবরাহের সঙ্গে কোনো মিল নেই। তবে তিনি অধিকতর তদন্তের স্বার্থে এ বিষয়ে এখনই বিস্তারিত জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেছিলেন।

 

লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের সেই সময়ের তত্ত্বাবধায়ক গোলাম মোহাম্মদ সেই সময় গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, গরমিল হওয়া ওষুধগুলো ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে সরবরাহ হওয়া। এ সময় আমি এখানে এই পদে কর্মরত ছিলাম না।

 

তিনি আরও বলেছিলেন, গরমিল হওয়া ওষুধের মধ্যে প্রতিটি ৬৪টাকা মূল্যের জেমিফ্লোক্সাসিন ট্যাবলেট থাকার কথা ছিল ৫৫হাজার। পাওয়া গেছে মাত্র ৫হাজার। শুধু এই একটি ওষুধের দাম বর্তমান বাজারদর হিসাবে ৩২লাখ টাকা।

 

তিনি অপর এক প্রশ্নের জবাবে গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, অধিকতর তদন্ত হলে মোট কী পরিমাণ অর্থের ওষুধের হিসাবে গরমিল হয়েছে, সেটা জানা যাবে। ধাপে ধাপে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা হবে।

 

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, গরমিল হওয়া ওষুধের মূল্য বর্তমান বাজার দরে প্রায় ৯৫ লাখ টাকা।

 

তবে স্টোরকিপার মোঃ সাহেদুল হক নিজেকে নির্দোষ দাবী করে সেই সময় সাংবাদিকদের বলেন, যেহেতু আমি স্টোরকিপার তাই আমাকেই দায়ী করে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সেই সময়ে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন ডাঃ আফম আহসান আলী বাবু। মূলত তার সময়ে এই ওষুধের হিসাবের গরমিল পাওয়া গেছে।

 

এর পরবর্তীতে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ গোলাম মোহাম্মদ ওষুধের হিসাবের গরমিল ধরায় তিনি অনেকের পথের কাটায় পরিণত হয়েছিলেন।

 

পরবর্তীতে তিনি চাকুরী হতে স্বেচ্ছায় অবসরের যান মর্মে জানা গেছে। বর্তমানে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন ডাঃ সিরাজুল ইসলাম।

 

উল্লেখ্য যে, ২০২০ সালের ২৩ জুন লালমনিরহাট জেলা শহরের ড্রাইভার পাড়া এলাকায় একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে ২৫প্রকারের সরকারি ওষুধ ও ১শত ৭৫টি ডিজিটাল ওজন পরিমাপক মেশিনসহ আব্দুর রাজ্জাক রেজা ও তার স্ত্রী নিলুফা ইয়াসমিনকে গ্রেফতার করে লালমনিরহাট সদর থানা পুলিশ। পরে ওই ২জন ও রেজার ভাই এবং আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্টোরকিপার মাহবুব আলম, কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্টোর কিপার জাকারিয়া এবং লালমনিরহাট সিভিল সার্জন অফিসের স্টোরকিপার মোয়াজ্জেম হোসেনের নাম উল্লেখ করে লালমনিরহাট সদর থানা পুলিশ বাদি হয়ে একটি মামলা দায়েল করে।

 

এরপর আব্দুর রাজ্জাক রেজার তথ্যের ভিত্তিতে ২০২০ সালের ২৫ জুন লালমনিরহাট জেলা শহরের টাউন ফার্মেসীতে লালমনিরহাট সদর থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ সরকারি ওষুধসহ ব্যবসায়ী শরাফত আলীকে গ্রেফতার করা হয়।

 

এদিকে টাউন ফার্মেসীর মালিক শরাফত আলীর তথ্যের ভিত্তিতে ২০২০ সালের ৩০ জুন সন্ধ্যায় লালমনিরহাট শহরের স্টোরপাড়াস্থ তার বাড়ীর মাটির নিচে গর্ত থেকে এবার ২বস্তা সরকারি ওষুধ উদ্ধার করেছে লালমনিরহাট সদর থানা পুলিশ।

সংবাদটি শেয়ার করুন




এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
Design & Developed by Freelancer Zone